নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রথমবারের মতো রাজধানীর পূর্বাচলে বসতে যাচ্ছে ২০২২ সালের বাণিজ্যমেলা। নবনির্মিত ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে এ মেলা। আগতদের সুবিধার্থে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে মেলা পর্যন্ত চলবে বিআরটিসির বাস। এসব বাসের নূন্যতম একটা ভাড়া থাকবে। এতে সহজেই কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মেলাতে যেতে পারবেন দর্শনার্থীরা। কুড়িল থেকে বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে মেলা প্রাঙ্গণের দূরত্ব অনেক। তবে যাতায়াতের জন্য যানবাহনের সংখ্যা কম। কুড়িল থেকে গাউছিয়া পর্যন্ত কিছু বিআরটিসি বাস চলাচল করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে মেলা প্রাঙ্গণে যাতায়াত কষ্টসাধ্য জনসাধারণের জন্য। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্যমেলাকে কেন্দ্র করে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে পূর্বাচলের মেলাকেন্দ্রে বিআরটিসির বাস চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মেলা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাসব্যাপী এই রুটে বিআরটিসির ৩০টি বাস চলাচলের জন্য চিঠি দিয়েছিলো রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। পরে বিটিআরসির পক্ষ থেকে তার অনুমোদন দেওয়া হয়। ইপিবি’র সচিব ও মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে বিআরটিসির ৩০টি বাস থাকবে। তবে বিআরটিসির চেয়ারম্যান বলেছেন প্রয়োজন হলে বাসের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
বেহাল সড়ক পেয়েছে নতুন রূপ: বাণিজ্যমেলায় যাতায়াতে সবচেয়ে বড় সংকট ছিল সড়কের বেহাল দশা। তবে মেলাকে কেন্দ্র করে কিছু সমস্যা ছাড়া পূর্বাচলের সেই সড়ক পেয়েছে নতুন রূপ। এর আগে পূর্বাচলের রাস্তার কাজের দায়িত্বে থাকা প্রকল্প পরিচালক বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে রাস্তায় সমস্যার কথাটি তুলে ধরেন। সভায় রাজউকের চেয়ারম্যান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ইপিবির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেই সভায় জানানো হয়েছিল, ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্বাচলের ১০ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের জন্য উপযোগী থাকবে। দুই লেন করে দুইপাশে চার লেনে গাড়ি চলবে। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো বেশিও থাকবে। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) সরেজমিন বাণিজ্যমেলা এলাকায় গেছে, কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণে যাতায়াতের প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কে পিচ ঢালা হয়েছে। তবে মাঝে কিছুকিছু জায়গায় সামান্য খানাখন্দ রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা পূর্বাচল ক্লাবের সামনের সড়ক। এ সড়কে চলাচলে গাড়ির জটলা তৈরি হচ্ছে। রাস্তা খারাপ থাকায় সেখানে থেমে থেমে গাড়ি চলতে হচ্ছে। পাশেই আন্ডারপাসের কাজ চলায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে এবার মেলা বসছে। এখানে স্বাভাবিকভাবেই দূরত্বের কারণে ক্রেতা কম থাকবে। এর মধ্যে যদি যাতায়াত ব্যবস্থা নির্বিঘœ না হয় তবে ক্রেতার সংখ্যা অনেক কমে যাবে। তবে আগের তুলনায় সড়ক অনেকটাই ভালো হয়েছে। পূর্বাচল ক্লাবের পাশের সড়কের বেহাল দশা কাটাতে না পারলে সড়কপথে সমস্যা থাকবে। এ প্রসঙ্গে ইপিবির সচিব ও মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, রাস্তা কুড়িলের মোড় থেকে বালু ব্রিজ পর্যন্ত একেবারেই ক্লিয়ার। তবে একটা জায়গায় সমস্যা রয়েছে, পূর্বাচল ক্লাবের দিকে। সেখানে একটি আন্ডারপাস আছে যেটার কাজ চলছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, দ্রুত কাজ করে একটা আন্ডারপাস খুলে দেওয়ার। তাহলে আর সমস্যা হবে না।
বাণিজ্যমেলায় থাকছে দেশি-বিদেশি ২২৫ স্টল: পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) আগামী ১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। বরাদ্দ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্টল আকর্ষণীয় ও নান্দনিক করে গড়ে তুলতে নানাভাবে সাজাচ্ছেন। এবারের মেলায় থাকছে দেশি-বিদেশি ২২৫টি স্টল। দেখা গেছে, স্টল আকর্ষণীয় ও নান্দনিক করে গড়ে তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন শ্রমিকরা। বিশেষ করে বাইরের স্টলগুলো এ ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে। কেউ কাঠের মধ্যে রংতুলিতে এঁকে, আবার কেউ কেউ কাচের ঘরের অন্তরালে সাজাচ্ছেন নিজেদের স্টলটি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারের মেলার প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। তবে চেষ্টা করছি যতটা আকর্ষণীয়ভাবে স্টলটি সাজানো যায়। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে সব চেষ্টাই অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কর্মকর্তারা জানান, মেলা কেন্দ্রের লেআউটে কিছুটা কারেকশন করা হয়েছে। তাই ভেতরে-বাইরে মিলে আপাতত ২২৫টি স্টল করা হয়েছে। ধারণক্ষমতা বেশি থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রেখে স্টল করা হয়েছে। ভেতরে চারশ’ করে মোট আটশ’ দোকান বানানো সম্ভব, কিন্তু মানুষের চলাচল নির্বিঘœ করতে কর্তৃপক্ষ ১৫৪টি স্টল বানিয়েছে। তাই এক স্টল থেকে আরেকটির দূরত্ব এবং মানুষের চলাচলের বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে। প্রাণ, ওয়ালটনসহ সনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় তাদের স্টল নিয়েছে। ভেতরে ২৪টি প্রিমিয়াম স্টল করা হয়েছে। তবে, কেন্দ্রের বাইরে অবকাঠামোগত ক্ষতি না করে প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে সাজাতে চায় সেভাবেই সাজাতে পারছেন। ইপিবির সচিব ও মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, নতুন বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণে সবমিলে ২২৫টি দেশি-বিদেশি স্টল থাকছে। ভেতরে ১৫৪টি রয়েছে। আর বাইরে রয়েছে ৭১টি স্টল। এসব স্টলের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি