নিজস্ব প্রতিবেদক :
মাদক মামলায় ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া অপর অভিযুক্ত ৩ নারীকে ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসির আদালতে এই রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল ১০ দিনের।
আদালত সুত্র জানায়, শুধুমাত্র মাদকের মামলায় তাদের এই রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা মামলা এখনো বাকি আছে। এই মামলায়ও তাদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানা গেছে।
নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সাবেক নির্বাহী পরিষদের সদস্য। তিনি ২০১৫, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের উত্তরা ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি এবং লায়ন ক্লাবের ঢাকা জোনের চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও নাসির জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাপার নবম কাউন্সিলে তিনি দলটির এই পদ পান।
এদিকে চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলার দ্বিতীয় প্রধান আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমি (৩৩)। জনপ্রিয় এই নায়িকাকে ফাদেঁ ফেলতে ষড়যন্ত্রের মুল হোতাও তিনি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্য একাধিক সূত্র জানায়, ক্লাব পাড়ায় অমিও একজন পরিচিত মুখ। তার বাবা তোফাজ্জল হোসেন একজন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। অনেক বছর ধরে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরে তিনি কাজ করে ঢাকার আশপাশে জমি ক্রয় করেন। বর্তমানে তার অঢেল সম্পদ রয়েছে।
একমাত্র সন্তান হওয়ায় এর উত্তরাধিকারী অমি। অমি ৭/৮ বছর আগে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক হন। এরপর দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি করেন। এ সুযোগে আদম পাচার করে প্রচুর অর্থ আয় করেন। এই অর্থের দাপটে অমি নানা অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকার উত্তরা ও আশকোনায় তাদের একাধিক বাড়ি ও প্লট রয়েছে। দক্ষিণখানে রয়েছে তার বালাখানা। এলাকায় এক নামে তাকে সবাই চেনে। আশকোনায় তাদের সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, শতশত কর্মী বিদেশে পাঠিয়ে ও প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন অমি। বিদেশে কর্মী পাঠানোর সূত্র ধরে সাবেক এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে অমির পরিবারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তাদের আলিশান একাধিক বাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুলও। অমির গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। সেখানে অনেক সম্পদ গড়েছেন। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমও গড়েছেন বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, রোববার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় তার বনানীর বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত জানান তিনি। পরীমণির ভাষ্য, ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুটি গাড়িতে করে উত্তরার উদ্দেশে বেরোন তারা। পথে অমি নামের সঙ্গীদের একজন দুই মিনিটের কাজের কথা বলে তাদের বোট ক্লাবে নিয়ে যান। এ সময় পরীমণির সঙ্গে তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমিও ছিলেন। ক্লাবে ভেতরে পরীমণিকে নির্যাতন করার সময় প্রতিবাদ করতে গিয়ে জিমিও হামলার শিকার হন। এই জিমির মাধ্যমে বছর দুয়েক আগে অমির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল পরীমণির।
এ ঘটনায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে সোমবার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয় জনের নামে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন পরীমণি। পরে দুপুরে ডিবি পুলিশের একটি টিম উত্তরা থেকে নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ (৬৫) পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হওয়া বাকিরা হলেন- তুহিন সিদ্দিকী অমি (৩৩), লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯), নাজমা আমিন স্নিগ্ধা (২৪)।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ