সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও তার মেয়ে তানজিন বৃষ্টিকে হয়রানির অভিযোগে তাদের এক কোটি করে মোট দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিল সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৯২ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেছেন।
রিটকারীর আইনজীবী এডভোকেট মনজিল মোরসেদ রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।
তিনি বলেন, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ এ ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে হবে। এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও তার মেয়ে তানজিন বৃষ্টিকে এক কোটি করে মোট দুই কোটি টাকা দিতে হবে।
তিনি জানান, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পরবর্তী মাস থেকে ২০ কিস্তিতে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও রায়ে নারী যাত্রীদের সঙ্গে অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে রায়ে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি এ রায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অনেকে বিদেশে যেতে বা প্রবাসে এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা হয়রানি ও নিপিড়নের শিকার হন। যেমনটি মেয়েসহ আমাকে হতে হয়েছে। হয়রানির যতটুকু মামলায় উল্লেখ করা হয় তার চেয়েও বেশি যন্ত্রণা আমাদের সয্য করতে হয়েছে।
নাহিদ সুলতানা যুথি বলেন, বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষকে বর্ণবাদ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি মেয়েসহ কানাডা যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। পাসপোর্ট সংক্রান্ত ফরমালিটিজ যেটি এয়ারলাইন্সের করার কথা সেটি তারা আমাদের ওপর চাপায়। তখন আমার মেয়ে তাদের বলে ‘ইট ইজ ইউর ডিউটি’। পরে তারা আমাদের ফোন পর্যন্ত কেড়ে নেয় এবং অবর্ণনীয় হয়রানি ও যন্ত্রণা দেয়। তখন আমাদের কানাডা যাওয়া হয়নি।বাংলাদেশে ফিরে আসতে হয়েছে।
এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি বলেন, আমি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে প্র্যাকটিসরত আইনজীবী। আমার বেলায় যদি এরূপ হয় তাহলে অন্যরা কিরূপ হয়রানির শিকার হন এ প্রশ্ন তুলেন তিনি।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের এ রায়টি মাইলফলক ও দৃষ্টান্তমূলক। এ রায়টি দেশ ও আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে আস্থা স্থাপন হবে যে, তারা কোনরূপ বেআইনি হয়রানির শিকার হলে আইনগত প্রতিকার এবং আইনের আশ্রয় লাভের সূযোগ রয়েছে।
নয় বছর আগে বাংলাদেশী দুই নাগরিক এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও তার মেয়ে তানজিন বৃষ্টিকে হয়রানির অভিযোগে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষকে গত বছরের ৮ অক্টোবর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিল সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত বলেন, দুজন নারীকে আবুধাবি এয়ারপোর্টে যে ধরনের হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে, তা অর্থদন্ত দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। আদালত ‘নেগলিজেন্স গেস টর্ট’ আইনের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণের রায় প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। এ ছাড়া আদালত ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করেন, যেন জেন্ডার বা শরীরের রং বিবেচনায় ভবিষ্যতে কোনো যাত্রীর সঙ্গে এ রকম আচরণ করা না হয়। আজ পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ হলো।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট মনজিল মোরসেদ। ইতিহাদের কান্ট্রি ম্যানেজারের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট আজমালুল হোসেন কিউসি।
২০১১ সালের ২৮ জুন আবুধাবি এয়ারপোর্টে ওই হয়রানির ঘটনা ঘটে। এরপর একই বছর ইতিহাস এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেন বাংলাদেশি যাত্রী তানজিন বৃষ্টি।
রিটে রেসপনডেন্ট হলেন-পররাষ্ট্র সচিব, সিভিল এভিয়েশন সচিব ও চেয়ারম্যান, এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ইতিহাদের অপারেশন ম্যানেজার, কান্ট্রি ম্যানেজারসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৪ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন।
এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল’ এলামনাই এসোসিয়েশের (রুলা) সভাপতি। তাছাড়াও তিনি আইনজীবীদের নানা কার্যক্রমসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রয়েছেন। – বাসস
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম