November 15, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, January 21st, 2022, 9:00 pm

সিন্ডিকেট তৎপরতায় বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ভোজ্যতেলের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিন্ডিকেট তৎপরতায় বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ভোজ্যতেলের দাম। বিগত কয়েক দশকের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আসন্ন পবিত্র রমজান মাস ঘিরে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে তৎপর হয়ে দেশের রিফাইনাররা। ইতিমধ্যে রিফাইনাররা সরকারকে প্রতিলিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েই বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারি হিসাবে বর্তমানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৮-১৫০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের রিফাইনাররা বিগত কয়েকবছর ধরেই রোজা শুরুর আড়াই থেকে তিন মাস আগে থেকেই চাপ দিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও অসাধু ব্যবসায়ীদের পুরনো কৌশলের মুখে অব্যাহতভাবে বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারস এ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফেকচারার এ্যাসোসিয়েশন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্যতেল সয়াবিন ও পাম তেলের বাড়ানোর জন্য চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ট্যারিফ কমিশনে প্রাথমিক পর্যালোচনা শেষে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। কিন্তু ইতিমধ্যে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখিতার দিকে ছুটছে।
সূত্র জানায়, সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর অব্যাহতভাবে দাম বাড়ার কারণে অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা টিসিবির তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বাজারে প্রতি ৫ লিটার বোতলজাত ক্যানে ১০ টাকা বেড়ে ৭১০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে ওই দামে ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। বরং ব্র্যান্ড ভেদে প্রতি ৫ লিটার বোতলজাত তেল ৭৪০-৭৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া ১ লিটারের প্রতিটি বোতল ১৬০-১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিকবাজারে বর্তমানে ভোজ্যতেলের দাম কমতে শুরু করেছে। ওমিক্রনের কারণে বিশ্বব্যাপী ভোগ্যপণ্যের বাজার এখন নি¤œœমুখী ধারায় রয়েছে। এমন অবস্থায় দাম কমার সুযোগ নিতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেয়া হলেও কিছু কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে ভোজ্যতেল আমদানিতে এলসি খুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ওই ব্যবসায়ীরা বরং সরকারকে চাপে ফেলে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কারসাজিতে লিপ্ত।
সূত্র আরো জানায়, আন্তর্জাতিকবাজারে দাম কমলেও রোজা সামনে রেখে দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে রিফাইনাররা সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণে বাণিজ্যমন্ত্রী দু’সপ্তাহের সময় চেয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর আগে যেখানে বিভিন্ন পণ্যে ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দেয়া হয়, সেখানে এদেশে বরাবর উল্টো ঘটনা ঘটছে। রমজান, ঈদ এলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। ব্যবসায়ীদের এমন মানসিকতার কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়লেও ব্যবসায়ীরা তা থেকে বেরিয়ে আসতে নারাজ।
এদিকে এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে আন্তর্জাতিকবাজারে ভোজ্যতেলের দাম নি¤œমুখী। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ৩ মাস আগে ক্রুড সয়াবিন ও পামওয়েল বেশি দাম দিয়ে আমদানি করেছে বলে জানিয়েছে। ব্যবসায়ীদের ওই দাবি কতটা যৌক্তিক তা যাচাই-বাছাই করা হবে। তবে আপাতত ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে না। তবে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়েই ব্যবসায়ীরা নিজেরাই ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোজ্যতেলের বর্তমান দামই থাকবে। তারপর বসে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হলে তা বাড়ানো হবে আর কমানোর প্রয়োজন হলে কমানো হবে। সবকিছু বিবেচনা করে যা সুবিধাজনক হবে তাই করা হবে।