ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা ‘ছোট ফেনী নদী’। নদীর দু’পাশে রয়েছে ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম। নদী পাড়ি দিয়ে দুই পাশের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে চলাচল করতে হয়। নদীতে একটি সেতু নিমার্ণের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো সুফল পায়নি। সেতুর অভাবে এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ জনগণের ভোগান্তির শেষ নেই। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে কথা বলে দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন ফেনীর জেলা প্রশাসক।
জানা গেছে, যারা নিয়মিত ছোট ফেনী নদী পারাপার হয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করেন, তাদের একমাত্র ভরসা একটি খেয়ানৌকা। বিশেষ করে ইউনিয়নের পূর্বঘোনা গ্রামের জনসাধারণদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামটির তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ছোট ফেনী নদী। এই গ্রামের স্কুল-মাদরাসা ও কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ হাজারও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন দড়িটানা নৌকা দিয়ে পার হয়ে ফেনী সদর এলাকায় যাতায়াত করতে হয়। নদী পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বর্ষা মৌসুমে এই নদী পার হওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।
স্থানীয় বিরলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, একটি সেতুর জন্য ভুক্তভোগী মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সেতু নির্মাণের কার্যকর কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না। এই অবস্থায় দুটি উপজেলার কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০ হাজার মানুষ সেতুর অভাবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দাবি জানাতে জানাতে এখন সাধারন মানুষ হতাশ হয়ে গেছে।
রাজাপুর ও পাঁচগাছিয়ার নদী পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আশেপাশের ১০-১৫টি গ্রাম ফেনী সদর ও দাগনভূঁঞা উপজেলার অর্ন্তভুক্ত হলেও এসব গ্রাম তাদের উপজেলা সদর থেকে অন্তত ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই এসব গ্রামের মানুষ বাজার-খরচ থেকে শুরু করে শিক্ষা-চিকিৎসা সেবাসহ নানা কাজে ও আত্মীয়তার সূত্রে জেলা ও উপজেলা শহরে যেতে হয়। এ অবস্থায় একটি সেতুর অভাবে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চলাচলকারী লোকজনের মধ্যে অন্তত পাঁচ শতাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে।
বিরলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীর অধিকাংশই রাজাপুর ঘোনার বাসিন্দা। ওই শিক্ষার্থীদের আশেপাশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে নৌকাডুবির আশংকা থাকায় স্কুলে আসে না।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ‘নৌকা পারাপারে আমাদের খুব ভয় হয়। কখনো কখনো নৌকায় উঠতে-নামতে আমাদের বই-খাতা, ড্রেস ভিজে যায়। তাই বাধ্য হয়ে ক্লাস না করে আমরা বাড়ি ফিরে যাই।’
বিরলী দারুল উলুম ইসলামীয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য মনোয়ার হোসেন শিমুল বলেন, এখানে ছোট ফেনী নদীর ওপর কোনো সেতু না থাকায় দিনের বেলায় নৌকা পাওয়া গেলেও রাতে মাঝি থাকে না। এতে রোগীসহ জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক লিটন বলেন, ‘এখানে একটি সেতু নির্মাণ হলে জনদুর্ভোগ অনেক কমবে। এ ব্যাপারে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে দ্রুতযোগযোগ করে সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, ‘উন্নয়নের বড় নিয়ামকই হচ্ছে যোগাযোগ। যোগাযোগের ফলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। ওই এলাকার জনগণ যেটি চাচ্ছেন সেটি অবশ্যই একটি বিবেচনার বিষয়। এ বিষয়ে আমি স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলবো এবং যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবো।’
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি