অনলাইন ডেস্ক :
দেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আবেদন এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়েছে। গত বছর দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনিয়ম সামনে এলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। আবার কোনোটিকে মোটা অংকের অর্থদ- দেয়া হয়। সরকার নিবন্ধনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়। ওই পরিপ্রেক্ষিতে এক বছরের মাথায় নতুন ৩ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। যা আগের অর্থবছরের দ্বিগুণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৯৮২ সালের মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজস (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স আইনের অধীনে বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংককে নিবন্ধন দেয়া হয়। ওই আইনের আলোকে প্রতি বছর ওসব প্রতিষ্ঠানের নবায়নও করা হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদন করলে চারটি ধাপ শেষে নিবন্ধন দেয়া হয়। আবেদনগুলো ত্রুটিপূর্ণ কিনা তা খতিয়ে দেখা হয়। তারপর সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে পরিদর্শন করা হয়। নিবন্ধনের শর্তগুলো ঠিক আছে কিনা তা সিভিল সার্জনই নিশ্চিত করেন। তার প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধনের সুপারিশ দেয়া হয়। গত বছর সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে বিপুলসংখ্যক অনিবন্ধিত বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। ফলে নিবন্ধনের আবেদনের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
সূত্র জানায়, দেশে অনলাইনে নিবন্ধিত ক্লিনিক বা হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ৮ হাজার ২১১টি। আর নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে প্রায় ৪ হাজার প্রতিষ্ঠান। তার বাইরে কয়েক হাজার অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থাকলেও তার সঠিক হিসাব নেই। তবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেনি তেমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ হাজারের কম নয়। ঢাকা বিভাগের পর অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে জনবহুল শহর ও শহরের উপকণ্ঠে ২ বছরে ওসব প্রতিষ্ঠান বেড়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) নিবন্ধনের জন্য নতুন ৩ হাজার ২৪২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। গত ৩১ মে পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে বরিশাল বিভাগে ২২৪টি, চট্টগ্রামে ৫৫২টি, ঢাকায় ৯৯৬টি, খুলনায় ৩৮২টি, ময়মনসিংহে ২৪৫টি, রাজশাহীতে ৩৮৯টি, রংপুরে ২৯৫টি ও সিলেট বিভাগে ১৫৯টি নতুন প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। ওসব আবেদনের বিপরীতে মোট নিবন্ধন পেয়েছে ৪৫২টি প্রতিষ্ঠান। আবেদনের ওই সংখ্যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে নবায়ন বাদে শুধু নতুন নিবন্ধনের জন্য ৮ বিভাগে আবেদন করেছিল ১ হাজার ৭২৫টি প্রতিষ্ঠান। যদিও চলমান করোনা মহামারীতে স্বাস্থ্যের বাজার তেমন একটা বাড়েনি। অনেক হাসপাতালই তার খরচই তুলতে পারছে না। যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এতোদিন নিবন্ধন করেনি তারাই বেশি আবেদন করেছে। মূলত কোনো এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার ওপরই ওই এলাকায় বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আধিক্য নির্ভর করে। আর ৪-৫টি অপারেশনের ওপর বেসরকারি ক্লিনিকের আয় নির্ভর করে। কিন্তু করোনার কারণে ওসব সেবা প্রায় বন্ধ।
এদিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আবেদন বাড়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরদের মতে, মানুষের মধ্যে বিনিয়োগের আগ্রহ বেড়েছে। কিছু টাকা হলেই মানুষ কোনো ব্যবসায় যেতে চায়। ফলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতাকে পুঁজি করেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন প্রক্রিয়া আগের চেয়ে অনেক সহজ করা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা জানান, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের বিষয়ে অধিদপ্তর কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যাতে কোনো প্রতিষ্ঠানই অনিবন্ধিত না থাকে। কেউ নিবন্ধন না নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালালে তাকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধন করা যায়। দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান অনিবন্ধিত থাকলেও একদিনে তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব নয়। তবে শিগগিরই আবেদনকৃতদের শর্ত ঠিক থাকলে নিবন্ধন দেয়া হবে। নিবন্ধন ছাড়া কাউকেই প্রতিষ্ঠান চালাতে দেয়া হবে না।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম