নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে পড়া ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে রকেট হামলার দায় নিয়ে অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়েছে। কোন পক্ষ এই হামলা চালিয়েছে সেটা এখনও নিশ্চিত নয় বাংলাদেশ। এদিকে রাশিয়া এই হামলার দায় ইউক্রেনের ওপর চাপিয়েছে। বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে হামলার পর ঢাকার রুশ দূতাবাস যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, সেখানে এই হামলার দায় ইউক্রেনের ওপর চাপানো হয়েছে। ইউক্রেনে জাতীয়বাদীরা পিছু হটার সময় এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে বলেও অভিযোগ করেছে রাশিয়া। এছাড়াও এই হামলায় নিহত হাদিসুর রহমানের নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশি জাহাজে হামলার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার রুশ দূতাবাস বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ১০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে জাহাজটিকে আঘাত হানার দৃশ্য রয়েছে। ভিডিওর শেষে ক্যামেরাম্যানকে বলতে শোনা যায় ‘রেকর্ডেড’। বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে হামলার পর জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে এই হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা হয়। তবে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, জাহাজে হামলা কারা করেছে, আমরা এখনও সেটা নিশ্চিত হতে পারিনি। রাশিয়াই যে হামলা করেছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রাশিয়া জানিয়েছে এই হামলা তারা করেনি। আমরা হামলার ঘটনা বের করার চেষ্টা করছি। এদিকে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র আটকে থাকা সকল নাবিক-ক্রু নিরাপদে আছেন। তারা অলভিয়া এলাকায় এক প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর তত্ত্বাবধানে আছেন বলে জানা গেছে। সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে তাদের সেখান থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ পোল্যান্ড কিংবা মালডরিয়ায় নিয়ে য়াওয়া হবে। সেখান থেকে বিমানে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা হবে বলে জানা গেছে। ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র আটকে থাকা সকল নাবিক-ক্রু নিরাপদে আছেন। তারা অলভিয়া এলাকায় এক প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর তত্ত্বাবধানে আছেন। সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে তাদের সেখান থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ পোল্যান্ড কিংবা মালডরিয়ায় নিয়ে য়াওয়া হবে। সেখান থেকে বিমানে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা হবে বলে জানা গেছে। নি আরও বলেন, প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান আরিফের মৃতদেহ যে কোনভাবে, যতোই কষ্টই হোক যাতে দেশে নিয়ে আসা যায়, সেই চেষ্টা চালাতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি আরও জানান, ২৮ নাবিক-ক্রুর খোঁজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অ্যাম্বেসি এবং লোকাল এজেন্ট রাখছেন। আমরাও তদারকি করছি। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাবিক ও ক্রুদের জাহাজ থেকে টাগবোটের সাহায্যে তীরে আনার পর অলভিয়া এলাকার নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। তবে কোথায় রাখা হয়েছে তা নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ করছে না লোকাল এজেন্ট, এমনটাই জানান আবু সুফিয়ান। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, জাহাজে আটকে থাকা সবাই সুস্থ আছেন, নিরাপদে আছেন। গত বৃহস্পতিবার তাদেরকে জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি থেকে টাগবোর্টের সাহায্যে উপকূলে আনা হয়েছে। এখন তারা নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, এখন তারা যে স্থানে অবস্থান করছে সেখান থেকে পোল্যা- ৮০০ কিলোমিটার এবং মালডরিয়া ২০০ কিলোমিটার দূরে। তাও যেতে হবে সড়ক পথে। যুদ্ধের কারণে কোন দেশে গেলে কম বাধায় যাওয়া যাবে আমরা সেটা ভাবছি। এদিকে বিএসসি’র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২৮ নাবিককে জাহাজ থেকে উপকূলে আনা এবং আশ্রয় দেওয়া সবই করেছেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যাবসায়ী। তিনি নিজ থেকে নাবিক- ক্রুদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন দপ্তর যোগাযোগ করছে। অলভিয়া বন্দরে নোঙর করা বিএসসির জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধিতে বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিট ও ইউক্রেন সময় ৫টা ২৫ মিনিটে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফ নিহত হন। বেঁচে থাকা বাকি ২৮ জন পরবর্তী হামলার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে যান। ভিডিও বার্তায় তারা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। উদ্ধার হওয়া নাবিক-ক্রুদের মধ্যে রয়েছেন- সেলিম মিয়া, রমা কৃষ্ণ বিশ্বাস, মো. রোকনুজ্জামান রাজিব, ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি, ফয়সাল আহমেদ সেতু, মোহাম্মদ ওমর ফারুক, সৈয়দ আসিফুল ইসলাম, রবিউল আউয়াল, সালমান সরওয়ার সামি, ফারজানা ইসলাম মৌ, মো. শেখ সাদি, মো. মাসুদুর রহমান, মো. জামাল হোসাইন, মোহাম্মদ হানিফ, মো. আমিনুর ইসলাম, মো. মহিন উদ্দিন, হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব, সাজ্জাদ ইবনে আলম, নাজমুল উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম, সরওয়ার হোসাইন, মো. মাসুম বিল্লাহ, মোহাম্মদ হোসাইন, মো. শফিকুর রহমান, মো. আতিকুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। হামলায় নিহত হাদিসুর রহমান আরিফের জন্ম ১৯৯৩ সালের ১৮ মে। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে। বিএসসি কার্যালয় সূত্র জানায়, জাহাজটি ইউক্রেনের বন্দর থেকে পণ্য ভর্তি করে ইতালির বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায় ওই বন্দর থেকে পণ্য লোডিং কাজ বাতিল করা হয়। এ কারণে জাহাজটি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙর করে রাখা হয়। তুরস্কের এরেগলি বন্দর থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি খালি জাহাজটি অলভিয়া বন্দরের উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। ২২ ফেব্রুয়ারি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছে। উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে রকেট হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। পরে গত বৃহস্পতিবার জাহাজ থেকে ২৮ নাবিকদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে ২৯ জন নাবিক নিয়ে আটকা পড়েছিল ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের এই জাহাজটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পৌঁছে। জাহাজটি ইউক্রেন থেকে সিরামিকের কাঁচামাল নিয়ে ইতালিতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার পর আর ফিরতে পারেনি। এদিকে ইউক্রেনের যুদ্ধ ঘিরে কৃষ্ণ সাগর এলাকায় আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ওই এলাকায় যুদ্ধের কারণে আরও বিভিন্ন দেশের জাহাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নৌসংস্থা-আইএমও বিশেষ বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম