অনলাইন ডেস্ক :
অবরুদ্ধ ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোলের আবাসিক এলাকায় চলছে রুশ সেনাদের বোমা হামলা। ধারাবাহিক গোলাবর্ষণে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। হাসপাতালে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। শনিবার শহরটিতে সাময়িক অস্ত্রবিরতি ঘোষণা হলেও, পরে রুশ হামলায় তা ভেস্তে যায়। ইউক্রেনে রুশ হামলায় থেমে গেলো দেড় বছরের ইউক্রেনীয় শিশু কিরিল ইয়াতস্কোরের জীবন। তাকে বাঁচাতে চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা ব্যর্থ। গত শুক্রবার রুশ সেনাদের ছোঁড়া শার্পনেল আঘাত হানে ইয়াতস্কোরের মাথায়। তারপরই অচেতন সে। কম্বলে মুড়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান মা ম্যারিনা। কিন্তু ততক্ষণে দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিয়েছে ছোট শিশুটি। ঘটনাটি গত শুক্রবার ইউক্রেনীয় অবরুদ্ধ শহর মারিওপোলের। সেখানে কয়েকদিন ধরেই চলছে রুশ বোমা হামলা। হাসপাতালে বাড়ছে আহত বাসিন্দা ও সেনাদের সংখ্যা। বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে একজন জানিয়েছেন, বোমা বিস্ফোরণের পরই চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। কিছুই দেখতে পারছিলাম না। আমি হামাগুড়ি দিয়ে সরে যেতে চেষ্টা করি। বুঝতে পারি, আমার পা নেই। তখন পাশে থাকা এক সহকর্মী রক্ত বন্ধে কিছু একটা দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়। মূলত আবাসিক এলাকা থেকেই আহতরা আসছেন জানিয়ে, প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসক এভগেনি দুবরভ বলেন, বিদ্যুৎ নেই। এমন পরিস্থিতিতেই আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় ওষুধ বিশেষ করে ব্যাথানাশক ওষুধ পাচ্ছিনা। কোনো বিরতি ছাড়াই এক সপ্তাহের বেশি আমরা কাজ করছি। এদিকে, মারিওপোল ও ভলনোভাখায় শনিবার সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণাসহ মানবিক করিডোর খোলার ঘোষণা দিলেও, কিছুক্ষণ পরই হামলা শুরু করে রাশিয়া। এতে ভেস্তে যায় বেসামরিক নাগরিকদের উদ্ধার কার্যক্রম।প্রতিবাদে গত শনিবার রুশ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন হাজারো ইউক্রেনীয়। দুই হাজারের বেশি মানুষ এ বিক্ষোভে রাস্তায় নামে। এ সময় তারা ইউক্রেনের পতাকা হাতে জাতীয় সংগীত গাইতে থাকে। রুশ সেনাদের বাড়ি ফিরে যেতে বলে শ্লোগান দিতে থাকে তারা।এ প্রসঙ্গে স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে সেনারা। রুশ বাহিনী খেরসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর শহরজুড়ে চেকপয়েন্ট বসিয়েছে। বিবিসি সূত্র থেকে জানা যায়, রুশ সেনারা ইউক্রেনীয় বিক্ষোভকারীদের তালিকা করছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা নিয়েছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই দেশে দেশে চলছে বিক্ষোভ। যত দিন গড়াচ্ছে, ততোই জোরালো হচ্ছে প্রতিবাদ। শনিবার ইউক্রেনের খেরসনে রাস্তায় নামে মানুষ। হাতে পতাকা আর কণ্ঠে জাতীয় সংগীত নিয়ে বাড়তে থাকে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে সেনারা। এদিকে, বিবিসি বলছে, রুশ সেনারা ইউক্রেনীয় বিক্ষোভকারীদের তালিকা করছে এবং তাদের গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা নিয়েছে। যুদ্ধ-বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিতে লন্ডনের ট্রাফেলগার স্কয়ারে জড়ো হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। প্রোটেক্ট ইউরোপ: সেইভ ইউক্রেন শ্লোগান দিতে থাকে তারা। ইউক্রেনের নীল-হলুদ পতাকা নিয়ে ইতালির রোমের রাজপথেও নেমেছে যুদ্ধবিরোধীরা। ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানাতে বিক্ষোভ হয়েছে প্যারিসেও। ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি তাদের। এতে অংশ নেন ফ্রান্সে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত, ভাদিম ওমেলচেঙ্কো। তিনি বলেন, প্রতিমিনিটে ইউক্রেনের বেসামরিকদের লক্ষ্য করে হামলা করছে রাশিয়া। শিশুসহ নিহত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। যা খুবই দুঃখজনক। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের বিক্ষোভ হয়েছে এশিয়াতেও। জাপানের টোকিওতে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকশো মানুষ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে জাপান সরকারের প্রতি আহ্বান তাদের।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২