November 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, March 8th, 2022, 8:28 pm

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার খালাসে দেরি করলে গুনতে হবে চার গুণ ভাড়া

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার খালাসে দেরি করা হলে ৪ গুণ ভাড়া গুনতে হবে। বন্দর থেকে কনটেইনার খালাসে ধীরগতিতে বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত কনটেইনারের চাপে বন্দরের স্বাভাবিক পণ্য হ্যান্ডলিং ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনারের ওপর ৪ গুণ হারে স্টোর রেন্ট আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। স্বাভাবিক হারে ভাড়া দিয়ে কনটেইনার ২০ দিন পর্যন্ত ইয়ার্ডে রাখা যাবে। তার মধ্যে খালাস না নিলে ২১তম দিন থেকে জরিমানা গুনতে হবে। আগামী ১৫ মার্চ থেকে বাড়তি স্টোর রেন্ট (ভাড়া) কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের সব ইয়ার্ডের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট সমান)। কিন্তু কনটেইনার খালাসে ধীরগতির কারণে প্রায়ই তা ধারণক্ষমতার কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড মান অনুযায়ী বন্দরগুলোয় ধারণক্ষমতার ৭০ শতাংশ স্থানে কনটেইনার রেখে বাকি ৩০ শতাংশ জায়গা ফাঁকা রাখা হয়। তা না হলে যন্ত্রপাতির সাহায্যে কনটেইনার নড়াচাড়ায় সমস্যায় যথাসময়ে জাহাজে কনটেইনার তোলা যায় না, আবার জাহাজ থেকে নামিয়ে যে গাড়ির মাধ্যমে খালাস দেয়া হবে তাতে তুলতেও বেগ পেতে হয়। এমন অবস্থায় বন্দরের স্বাভবিক পণ্য হ্যান্ডলিং ব্যাহত হয়। সেজন্যই চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা ৩৪-৩৫ হাজার অতিক্রম করলেই বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দ্রুত ডেলিভারি নিতে আমদানিকারকদের তাগাদা দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, বন্দর থেকে দ্রুত কনটেইনার খালাস নিতে গত ২ মার্চ বন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের উদ্দেশে বন্দর কর্তৃপক্ষ নোটিশ দিয়েছে। ওই নোটিশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারিতে অত্যন্ত ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। কোনো কোনো আমদানিকারক তাদের আমদানীকৃত কনটেইনার ২১ দিন বা তারও অধিক সময় ছাড় না নিয়ে বন্দরের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করছেন। তাতে বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রমে বিঘœ ঘটছে। বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম নির্বিঘœ রেখে আমদানি-রপ্তানিকারকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেয়ার লক্ষ্যে অবিলম্বে চট্টগ্রাম বন্দরে স্থিত আমদানীকৃত এফসিএল কনটেইনারগুলো বন্দর অভ্যন্তর থেকে দ্রুত খালাস নেয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। অন্যথায় রেগুলেশনস ফর ওয়ার্কিং অব চিটাগং পোর্ট (কার্গো অ্যান্ড কনটেইনার) ২০০১-এর ১৬০ ধারার আলোকে কমন ল্যান্ডিং তারিখের পর ২১তম দিন থেকে প্রযোজ্য স্ন্যাবের স্বাভাবিক ভাড়ার ওপর চার গুণ হারে স্টোর রেন্ট আরোপে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হবে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী ১৫ মার্চ থেকে তা কার্যকর হবে।
এদিকে বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, কনটেইনার খালাসের গতি কমার জন্য এককভাবে বন্দর ব্যবহারকারীরা দায়ী নয়। বিভিন্ন সময় উদ্ভূত নানা জটিল পরিস্থিতিতে আমদানিকারকের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে খালাস নেয়া সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে কনটেইনারের অতিরিক্ত অবস্থানের ওপর জরিমানা আরোপ করলে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন বাধ্য হয়ে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়। জরিমানা আরোপ সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। বর্তমানে এমনিতেই আমদানি খরচ বেশি পড়ছে। তার ওপর জরিমানা আরোপ করলে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেক সময় পণ্য এসে গেলেও বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এসে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। আবার ব্যাংক, কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যেসব আর্থিক লেনদেন ও কাগজপত্র তৈরির নিয়ম রয়েছে তা করতেও কিছু সময় ব্যয় হয়। এমনও হয়, আমদানিকারক একটি পণ্য আনলেন কিন্তু ওই সময়ে সেই পণ্য প্রচুর পরিমাণে বাজারে এসে যাওয়ায় দাম পড়ে গেছে। তখন পণ্য খালাস নিলে নিশ্চিত লোকসানের মুখোমুখি হতে হবে। ওই অবস্থায় আমদানিকারক পণ্য না নিয়ে বন্দরে রেখে দেয়াটাকেই ভালো উপায় মনে করেন। সেজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে যেন কোনো পণ্য প্রচুর পরিমাণে না আসতে পারে তা তদারকি করতে হবে। পাশাপাশি বন্দরের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াতে নতুন নতুন কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ করা জরুরি।
অন্যদিকে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, কনটেইনার খালাসের গতি কমে গেলে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের নোটিশ দিয়ে থাকে। এটা এক রকম হুঁশিয়ার করে দেয়া। তারপরও যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় সেক্ষেত্রে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে বাধ্য হয়ে জরিমানা আরোপ করতে হয়।