নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জ¦ালানি, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানো পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এমন অবস্থায় আমদানি পণ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সতর্ক পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে ইতোমধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ প্রতিবছর রাশিয়া ও ইউক্রেনে সরাসরি এবং অন্য দেশের মাধ্যমে তৈরি পোশাক, পাট, হিমায়িত খাদ্য, চা, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক পণ্য, তামাক, মাছ, ওষুধ, শাকসবজি ইত্যাদি রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। আবার ওই দুই দেশ থেকে বাংলাদেশে গম, ভুট্টা, সরিষা, মটর ডাল, মসুর ডাল, সূর্যমুখী তেল, খনিজ সামগ্রী, রাসায়নিক পদার্থ, যন্ত্রাংশ, প্লাস্টিকসহ নানা পণ্য আমদানি করা হয়। কিন্তু যুদ্ধের কারণে দেশ দুটির সাথে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে পড়েছে। আর রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে বাংলাদেশেও নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রতিবছর দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৫০ লাখ টন গম আমদানি করা হয়। আর তার দুই-তৃতীয়াংশই রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে ওই দেশ দুটি থেকে ইতোমধ্যে গম ও ভুট্টা আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের বাজারে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি ওই দুটি দেশ জ¦ালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, ভোজ্য তেলসহ রাসায়নিক পদার্থ, খনিজ সামগ্রী ও যন্ত্রাংশ রপ্তানি করে। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হতেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। কারণ যুদ্ধ শুরুর পর কৃষ্ণ সাগরে কোনো পণ্যবাহী জাহাজ ঢুকছে না। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশসহ অন্য আমদানিকারক দেশগুলোতে চাহিদার বিপরীতে কম জোগান এবং জ¦ালানি তেলের ঘাটতির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেজন্য ইতোমধ্যে দেশের বাজারে গম, ভুট্টা ও ভোজ্য তেলের মূল্য বেড়ে গেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেয়া নির্দেশনায় বিদ্যমান সংকট মোকাবেলায় ৬টি সুপারিশ করা হয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, চলমান যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আগেই বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যাপ্ত গম ও ভুট্টা আমদানি করে মজুদ করা, রাশিয়া ও ইউক্রেন ছাড়া নতুন নতুন দেশে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের বাজার তৈরি করা, রাশিয়ার ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়নে দেশে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ চালিয়ে নিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া, ওই অঞ্চলে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কৃষ্ণ সাগরের আশপাশের দেশগুলোর আকাশপথ ব্যবহার করা, গম ও ভুট্টা আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে দেশে উৎপাদন বাড়ানো এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে অপপ্রচার বা গুজব ছড়িয়ে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেদিকে নজরদারি বাড়ানো।
অন্যদিকে দেশের গম আমদানিকারকদের মতে, এই মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ বাজারে গমের কোনো সংকট নেই। দাম বাড়লেও পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। গম আমদানিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর নির্ভরতা বেশি হলেও বাংলাদেশের ভারত, আর্জেন্টিনার মতো বিকল্প বাজার রয়েছে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও উন্নত জাতের গম আমদানি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত বাণিজ্য সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুসারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক উদ্যোগ নিচ্ছে। আর রাশিয়া ও ইউক্রেনে খুব বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় না। ফলে দেশের পোশাক খাতে রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়ার শঙ্কা নেই। তবে ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে জ¦ালানি তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। আর জাহাজ চলাচল এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি