নিউজ ডেস্ক :
বাড়ানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল। আগামী অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হবে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুতে যানবাহনভেদে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা টোল বাড়ানো হয়েছে। বিগত ১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুর জন্য প্রথম টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছিল। তারপর সরকার ১৪ বছর পর ২০১১ সালে টোল হার ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি করে সরকার। আর এক দশক পর দ্বিতীয় দফায় ফের ১৭ শতাংশ হারে সেতুটির টোল বাড়ানো হলো। তাছাড়া বিগত ২০০৮ সালে মুক্তারপুর সেতুর টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছিল। তারপর এই প্রথমবার মুক্তারপুর সেতুটির টোল বাড়ানো হয়েছে। তবে পদ্মা সেতুর জন্য এখনো চূড়ান্ত করেনি সরকার। যদিও নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী বছরের জুনে সেতুটিতে গাড়ি চলাচল শুরুর লক্ষ্য নির্ধারণ রয়েছে। সেজন্য সরকার এখনই সেতুটির জন্য টোল হার চূড়ান্ত করতে চায় না। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) বোর্ড সভায় পদ্মা সেতুর জন্য একটি টোল প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলেও সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ তা অনুমোদন করেনি। তবে বিবিএ আগামী অক্টোবর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। সেতু বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বঙ্গবন্ধু সেতুতে মোটরসাইকেলে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা, হালকা যানবাহনে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা, মাইক্রো/পিকআপে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা, ছোট বাসে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা, বড় বাসে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা, ছোট ট্রাকে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা, মাঝারি ট্রাকে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ২৫০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকে ২০০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিন এক্সেলের ট্রাকে ২ হাজার টাকা, চার এক্সেলের ট্রেইলারে ৩ হাজার টাকা, চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলারে ৩ হাজার টাকার পাশাপাশি অতিরিক্ত এক্সেলপ্রতি আরো ১ হাজার টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এতোদিন সেতু পারাপারের ক্ষেত্রে এ ক্যাটাগরিগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তাছাড়া ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে বার্ষিক টোল হার ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা করা হয়েছে। আর মুক্তারপুর সেতুতে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা টোল বাড়ানো হয়েছে। ১০ টাকা বাড়িয়ে সিএনজি/অটোরিকশায় ৩০ টাকা, কার/টেম্পোতে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা, জিপ/মাইক্রো/পিকআপে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা, ছোট বাসে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, বড় বাসে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২৫০ টাকা, ৫ টন পর্যন্ত ট্রাকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২৫০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে তিন এক্সেলের ট্রাকে ৮০০ টাকা, চার এক্সেলের ট্রেইলারে ১ হাজার টাকা, চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলারে ১ হাজার টাকার পাশাপাশি অতিরিক্ত এক্সেলপ্রতি আরো ৫০০ টাকা আদায় করা হবে। তাছাড়া এতোদিন সেতু পারাপারের ক্ষেত্রে এ ক্যাটাগরিগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ফেরি পারাপার করতে যতো টাকা টোল দিতে হয়, তার চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি ধরে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর জন্য টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। টোল আদায়ের জন্য যানবাহনের ১৩টি শ্রেণী নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী মোটরসাইকেলে সেতু পার হতে দিতে হবে ১০০ টাকা। কার আর জিপের টোল ৭৫০ টাকা। ১ হাজার ২০০ টাকা টোল দিতে হবে স্টেশনওয়াগন, প্রাডো, নিশানের মতো বিলাসবহুল জিপে। মাইক্রোবাসের টোল ১ হাজার ৩০০ টাকা। ছোট, মাঝারি ও বড় বাসে টোল দিতে হবে যথাক্রমে ১ হাজার ৪০০, ২ হাজার ও ২ হাজার ৪০০ টাকা। ট্রাকের ৪টি শ্রেণী নির্ধারণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৫ টন পর্যন্ত ট্রাকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টন পর্যন্ত ট্রাকে ২ হাজার ১০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকে ২ হাজার ৮০০ টাকা আর তিন এক্সেলের ট্রাকের টোল প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। একইভাবে চার এক্সেলের ট্রেইলারে ৬ হাজার টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি ট্রেইলারে ৬ হাজার টাকার সঙ্গে এক্সেলপ্রতি দেড় হাজার টাকা টোল দিতে হবে। পদ্মা সেতুর জন্য এ টোল প্রস্তাব বিবিএর ১১০তম বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হলেও তা অনুমোদন পায়নি।
এদিকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তাপুর সেতুর টোল বৃদ্ধি এবং পদ্মা সেতুর টোল প্রস্তাব অনুমোদন না পাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক জানান, আগামী ১ অক্টোবর থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুর নতুন টোল হার কার্যকর হবে। তবে পদ্মা সেতুর এখনো আরো কাজ বাকি। পরিকল্পনা অনুযায়ী যানবাহন চলাচল শুরু হতে আরো এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে। তার ওপর আবার বিদ্যমান মহামারীর কারণে সবকিছুতেই এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে টোল প্রস্তাবটি এখনই অনুমোদনের পক্ষে নয় বিবিএর পরিচালনা পর্ষদ। তাই প্রস্তাবটি আগামী বোর্ড সভার আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন
এলডিসি গ্রাজুয়েশনে বাংলাদেশের সুষ্ঠু উত্তরণে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস জাতিসংঘের
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা নিয়ে ইউনূস-আইসিসির আলোচনা
দেশ সংস্কারে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র