অনলাইন ডেস্ক :
আকাশ ছোঁয়া মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়াতে গভীর অর্থনৈতিক সংকটে ডুবে গেছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে সরকার বিরোধী আন্দোলনও তীব্র হয়ে উঠেছে। একপর্যায়ে দেশটি নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে এই দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপালও বর্তমানে এমনই অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাঠমন্ডুর রপ্তানি ব্যয় মেটানোর মতো পর্যাপ্ত রিজার্ভ না থাকায় বর্তমানে বিলাসবহুল সামগ্রী আমদানি নিষিদ্ধ করার সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্ত বিশ্বের নজর কেড়েছে। ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষের ল্যান্ডলকড দেশ নেপাল। দেশটি জ¦ালানিসহ প্রায় সকল প্রয়োজনীয় জিনিসের আমদানির জন্য ভারতের উপর নির্ভর করে থাকে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার মতো, নেপালের অর্থনীতিও পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য সীমিত পণ্য রপ্তানি করে থাকে যা দিয়ে দেশটির আমদানি ব্যয় মেটানো হয়।দ্য ফ্রি প্রেস জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯-২১ সালে শ্রীলঙ্কা সরকারের কিছু পদক্ষেপের কারণে দেশটির অর্থনীতি আজ অস্থিতিশীল অবস্থা। আর নেপালে গত বছর তৈরি হওয়া রাজনৈতিক সংকট দেশের অর্থনৈতিক সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করেছে বলে ধারণা করা হয়। নেপাল সরকার তাই বেশ কিছুদিন ধরেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রার (ফরেক্স) রিজার্ভের পতন ঠেকানোর করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এখন সরকার এই সমস্যার সমাধানের লক্ষে বিলাসবহুল সকল পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ ছাড়া গত ১০ এপ্রিল পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মহা প্রসাদ অধিকারীকে বরখাস্ত করা হয়। নেপালের জাতীয় দৈনিক পত্রিকা মাইরিপাবলিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মুখপাত্র গুনাকর ভট্ট বলেন, বর্তমানে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল ফরেক্স রিজার্ভ যথাযথ বজায় রাখা এবং এর পতন রোধ করা। তিনি আরও বলেন, ক্রমবর্ধমান ঘাটতি এবং অধিক আমদানির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন রোধ করতে বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। নেপালের বার্ষিক আমদানি বিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ট্রিলিয়ন-রুপির মার্ক অতিক্রম করেছে। তাছাড়া ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের পরে পুনর্গঠন অভিযান এবং রেমিট্যান্স আয় হ্রাসের কারণে এমন পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছিল। এর তিন বছর পর মাত্র ছয় মাসে কোভিডের বিধ্বংসী প্রভাব থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করতে বিদেশি পণ্য কিনতে এক ট্রিলিয়ন রুপি খরচ করে নেপাল। এ ছাড়া কেপি শর্মা অলি সরকারের পতনের পরেই দেশে রাজনৈতিক সংকটের কারণে গত বছরের জুলাই থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেতে শুরু করে। পর্যটন ও রপ্তানি থেকে আয় এবং রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়ার পর থেকে আমদানি বেড়ে গেছে এবং আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে কয়েকগুণ। নেপালের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী পণ্য, সয়াবিন তেল এবং পাম তেল। যদিও নেপাল সামান্য পরিমাণ সয়াবিন উৎপাদন করলেও পাম তেল উৎপাদন করে না। এখানে আমদানিই রপ্তানি। দেশটি সাফটা বা দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য এলাকা চুক্তির সুবিধা পায় বলেই তেল আমদানি করার পর তা আবার রপ্তানির মাধ্যমে আয় করে থাকে। এই ক্রমবর্ধমান আমদানি এবং নেপালের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আয় রেমিট্যান্স খাত এবং পর্যটন ও রপ্তানি খাতে আয় হ্রাস পাওয়া দেশটি ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি