জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের ভেতরে রাস্তা পাঁকাকরণের কাজ বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। ২৭ এপ্রিল বুধবার বেলার সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক আইনজীবী শাহ সাহেদা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্যটি জানানো হয়েছে। বেলার আইনজীবী এডভোকেট এস হাসানুল বান্না স্বাক্ষরিত প্রেরিত নোটিশে এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশ প্রেরণের ৭ (সাত) দিনের মধ্যে বেলাকে অবহিত করার সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন, পরিবেশ, বন ও জলাবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার, সিলেটের বিভাগীয বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, এলজিইডির মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী, জুড়ীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্যারাডাইজ কনস্ট্রাকশনের মালিক সাইদুল ইসলাম।
২৭ এপ্রিল প্রেরিত নোটিশে বলা হয়েছে, সংরক্ষিত বনে এ ধরনের রাস্তা নির্মাণ করা হলে বনের অনেক পুরোনো সেগুন গাছ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। বনের ভেতর দিয়ে যানবাহন চলাচলের কারণে বন্যপ্রাণী মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে, বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হবে, বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংরক্ষিত বনের ভেতর সেগুন গাছ চুরির ঘটনা সংক্রান্ত সংবাদ বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়ে থাকে। সংরক্ষিত বনের মধ্যে এরূপ রাস্তা সেগুন গাছ চুরি দ্ব্যার্থহীনভাবে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে।
নোটিশে আরো বলা হয়েছে যে, দেশের বনভূমির বিরুদ্ধ ব্যবহার রোধে বেলা’র দায়েরকৃত মামলায় (নং-২৫৬৪/২০১৯) মহামান্য হাইকোর্ট ১১ মার্চ, ২০১৯ তারিখে প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী দেশের সর্বশেষ বিদ্যমান বনভূমির যথাযথ সংরক্ষণ জরুরী। একইসাথে দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে দেশে সর্বশেষ বিদ্যমান বনভূমি হিসেবে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনকে সমৃদ্ধশালী করে তার যথাযথ সংরক্ষণের জোরালো দাবি জানানো হচ্ছে।
নোটিশে লাঠিটিলা বনের ভেতর রাস্তা পাকাকরণের কাজ বন্ধসহ সেখানে বনবিরুদ্ধ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লাঠিটিলা বন পাথারিয়া হিল রিজার্ভ ফরেস্টের (একটি অংশ। প্রাকৃতিক মিশ্র চিরসবুজ এ বনের আয়তন ৫৬৩১ একর। ১৯২০ সালের ২১ এপ্রিল সরকারী প্রজ্ঞাপন জারী করে এ বনকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। এ বনাঞ্চলে ২০৯ প্রজাতির প্রাণী এবং ৬০৩ ধরনের উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। এ বন পরিবেশগতভাবে অরক্ষিত ইন্দো-বার্মা জীববৈচিত্র্য হটস্পটের অংশ এবং দেশের ছয়টি আন্ত:সীমান্ত সংরক্ষিত বনের একটি। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের ভেতরে এলজিইডি এক কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের কাজ শুরু করেছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংরক্ষিত বনে এ ধরণের রাস্তা নির্মাণ করা হলে বনের অনেক পুরনো সেগুন গাছ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। বনের ভেতর দিয়ে যানবাহন চলাচলের কারণে বন্যপ্রাণী মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে, বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হবে এবং বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ বনের মূল্যবান সেগুনগাছ চুরির ঘটনা সংক্রান্ত সংবাদ প্রায়ই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়ে থাকে। সংরক্ষিত বনের মধ্যে রাস্তা পাকা হলে সেগুনগাছ চুরি বহু গুণ বেড়ে যাবে।
এলজিইডি ও বন বিভাগ সূত্র জানায়, জুড়ীর লাঠিটিলা এলাকায় লাঠিছড়া থেকে লালছড়া হয়ে রুপাছড়া পর্যন্ত কাঁচা রাস্তার শুরু থেকে এক কিলোমিটার জায়গা পাকাকরণের জন্য এলজিইডি দরপত্র আহ্বান করে। প্রায় ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘প্যারাডাইস কনস্ট্রাকশন’ নামের স্থানীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজটি পায়। কার্যাদেশে ২ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করতে বলা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা সম্পন্ন হওয়ার কথা। সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের জন্য রাস্তার পাশে ইট স্তূপ করতে শুরু করে এবং এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করে। বন বিভাগের লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে মৌলভীবাজার জেলার (শ্রীমঙ্গল) সহকারী বন সংরক্ষককে লিখিতভাবে জানান। এর আগে ১০ এপ্রিল স্থানীয় লাঠিটিলা বিটের বিট কর্মকর্তা মোঃ সালাহ উদ্দিন এবং ১৪ এপ্রিল রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন রাস্তার কাজ বন্ধ রাখতে এলজিইডির উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলীর কাছে পৃথক পৃথক চিঠি দেন। ওই চিঠিতে সংরক্ষিত বন এলাকায় কোনো ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুসরণ করার অনুরোধ করেন। এছাড়া রাস্তাটির কাজের দরপত্র আহ্বানের আগে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো পরামর্শ বা অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। তাই, অনতিবিলম্বে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। কিন্তু, বন বিভাগের বাধা উপেক্ষা করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাস্তা পাকাকরণের কাজ শুরু করে ফেলে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি