নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুর বিস্তারের তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। কারণ স্বাস্থ্য অধিদফতর ইতিমধ্যে প্রাক-মৌসুম জরিপেই গত দুই বছরের তুলনায় এবার এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পেয়েছে। জরিপে ঢাকা শহরের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হয়। আর এখন মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে এডিস মশা। ফলে এবার ডেঙ্গুর বিস্তার তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশেষজ্ঞরা এখনই কর্মসূচি নেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশের মানুষ ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি দেখে। ওই বছর লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৯ হাজার। বৃষ্টিপাত শুরু হলে এডিস মশার ঘনত্ব আরো বাড়বে। সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর ওই চার মাস মূল মৌসুম। ইতিমধ্যে কয়েক দিনের থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি এডিস মশার বংশ বিস্তারে প্রভাব ফেলছে। পাত্রে জমা পানিতে এডিস মশা জন্মায়। কোনো পাত্রে ৭ দিন পানি জমে থাকলেই সেখানে এডিস মশা জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে। গত কয়েক বছরে গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরে নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি, লিফটের গর্ত, টাইলস ভেজানোর চৌবাচ্চা, ড্রাম, বালতি, ওয়াসার মিটার রাখার জায়গা ইত্যাদি স্থানে এডিস মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি ছিল। তাছাড়া দইয়ের পাত্র, পানির জার, ভাঙা কমোড, বেসিনসহ যে কোনো ছোট বড় পাত্র যেখানে ২ সেন্টিমিটার পানি জমা হতে পারে সেখানেই এডিস মশার প্রজনন হতে পারে।
সূত্র জানায়, ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত একটি ভাইরাসঘটিত জ্বর রোগ। ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি স্ট্রেইনের (ডেন-১, ২, ৩ ও ৪) যে কোনো একটি দিয়ে ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে। আর এডিস প্রজাতির মশা ওই ভাইরাস বহন করে। এডিস মশার দুটি প্রজাতি ঢাকা শহরে দেখা যায়। তার মধ্যে একটি হলো এডিস ইজিপ্টি, আরেকটি এডিস অ্যালবোপিকটাস। এডিস ইজিপ্টিকে নগরের মশা বা গৃহপালিত মশা বলা হয়। এই মশা নগরীর বাড়ি ও বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানিতে জন্মায়। ইজিপ্টি মশাই ডেঙ্গুর প্রধান বাহক। ইজিপ্টি প্রজাতির এডিস মশা থেকে দেশে ৯৫ ভাগ ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়। ডেঙ্গুর সেকেন্ডারি বা এপিডেমিক বাহক হচ্ছে এডিস অ্যালবোপিকটাস। অ্যালবোপিকটাস মশা বিভিন্ন পাত্র ছাড়াও গাছগাছালি যুক্ত এলাকায় গাছের কোটর, কলা গাছের দুই পাতার মাঝখান, কচুপাতার মাঝখান, কাটা বাঁশের গোড়ায় জমে থাকা পানিতে জন্মায়।
এদিকে ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু আসে। তখন তাকে ঢাকা ফিভার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০০০ সালে সরকারি হিসাবমতে ৫ হাজার ৫০০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় এবং ৫৫০ জন মারা যায়।
অন্যদিকে এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার জানান, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯৮ ওয়ার্ডের ১১০ স্থানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা প্রাক-মৌসুম এডিস মশার ঘনত্বের জরিপ করেছে। প্রতি বছর তিনবার (প্রাক-মৌসুম, মৌসুম ও মৌসুম-পরবর্তী) এডিস মশার ঘনত্বের জরিপ করা হয়। ঘনত্বের মাত্রা থেকে অনুমান করা যায় এডিস মশাবাহিত রোগ, বিশেষ করে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া কেমন হতে পারে। এ বছর প্রাক-মৌসুম জরিপে ঢাকা শহরের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। তাছাড়া এ বছর প্রাক-মৌসুম এডিস মশার ঘনত্ব গত বছরের প্রাক-মৌসুম এডিস মশার ঘনত্বের তুলনায় বেশি। এমন অবস্থায় পানি জমতে পারে এমন পাত্র অপসারণ করে এডিস মশার বংশ বিস্তারের পরিবেশ ধ্বংস করতে হবে। আর এখনই পদক্ষেপ নিলে মৌসুমে নিয়ন্ত্রণে থাকবে ডেঙ্গু।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২