জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা :
ভিজিডি কর্মসুচির চাল বিক্রির অভিযোগে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউপি সচিব রোকনুজ্জামানকে সোমবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার (৫ মে) গোবিন্দগঞ্জ চৌকি আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন জানানো হয়। কিন্তু বিচারক না থাকায় জামিনের শুনানি হয়নি। অপরদিকে চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ইউপি সচিবের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কামারদহ ইউনিয়নে দরিদ্রদের মধ্যে ভিজিডি কর্মসুচির চাল বিতরণের জন্য সাবেক চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রতন প্রতিমাসে ১৬৪টি ভিজিডি কার্ডের বিপরীতে ৪ হাজার ৯২০ কেজি করে চাল গোডাউন থেকে উত্তোলন করে সুবিধা ভোগিদের মধ্যে বিতরণ করতেন। সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনে তৌকির হাসান নির্বাচিত হন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ঈদকে সামনে রেখে গত ২১ এপ্রিল কামারদহ ইউনিয়নে দরিদ্রদের মধ্যে ভিজিডি কর্মসুচির চাল বিতরণ করা হয়। ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ হয় ১৬৪টি ভিজিডি কার্ড। এরমধ্যে ওইদিন প্রতিজনকে ৩০ কেজি করে ১২১ জনের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়। অবশিষ্ট ৪৩ জন সুবিধা ভোগি উপস্থিত না হওয়ায় তাদের ভুয়া নামের তালিকা নিয়ে সন্দেহ হয় বর্তমান চেয়ারম্যান তৌকির হাসানের। তিনি বিষয়টি তাৎক্ষনিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। ওইদিন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে বর্তমান চেয়ারম্যান তৌকির হাসান ৪৩ জন ভুয়া নামের তালিকার বরাদ্দকৃত এক হাজার ২৯০ কেজি চাল ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের জিম্মায় রেখে তা ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে সংরক্ষণ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন গ্রাম পুলিশ।
পরবর্তীতে ৪৩ জন ভুয়া নামের তালিকার বরাদ্দকৃত এক হাজার ২৯০ কেজি চাল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রাকে করে ব্যাপারি নিয়ে যাওয়ার সময় কতিপয় স্থানীয় ব্যক্তি ভিডিও করে। পরে ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়। এরপর রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইউপি সচিব রোকনুজ্জামানকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নেন। সেখান থেকে ওইদিন সন্ধ্যায় ইউএনও তাকে থানায় সোপর্দ করে। পরদিন সোমবার পুলিশ তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলা কারাগারে পাঠায়।
এবিষয়ে বৃহস্পতিবার (৫ মে) বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি ইজার উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, রোববার সন্ধ্যায় ইউএনও তাঁর কার্যালয় থেকে ইউপি সচিবকে থানায় পাঠিয়ে দেন। পরে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও মো. আরিফ হোসেন বলেন, চাল আত্মসাতের সঙ্গে ইউপি সচিব জড়িত কিনা সেবিষয়ে তদন্ত চলছে। তাই এবিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে ইউপি সচিব আমলযোগ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে পুলিশ তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু ইউএনও ইউপি সচিবকে থানায় পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সচিব বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করা যেত। উপরন্ত ঈদের আগে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি অমানবিক। এলাকাবাসি বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে প্রকৃত জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি কর্মচারী আইন ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সাথে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফোজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগ গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে। ইউপি সচিবদের নিয়োগ দেন জেলা প্রশাসক।
এবিষয়ে জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও বলেন, পুলিশ ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি এবিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেননি। একই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, ইউপি সচিবরা বিধিবদ্ধ সংস্থার কমচারি। তার ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য হবে না। তবে তাদের জন্য পৃথক বিধিমালা রয়েছে।
জানতে চাইলে সম্প্রতি নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান তৌকির হাসান বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেই প্রকৃত কার্ডধারী ছাড়া কোন ক্রমেই চাল বিতরণ করা হবে না। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত ২১ এপ্রিল চাল বিতরণ করতে গিয়ে দেখতে পাই ১২১ জন উপকারভোগি চাল গ্রহন করেন। কিন্তু ৪৩ জন কার্ডধারী চাল নিতে আসেন নাই। তখন বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি। তিনি আরও বলেন, অনুপস্থিত ৪৩ কার্ডধারীর চাল ইউপি সচিবের জিম্মায় রাখা হয়।
অপরদিকে ইউপি সচিবকে কারাগারে পাঠানো হলেও আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোন মামলা দায়ের হয়নি।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি