November 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, May 6th, 2022, 9:52 pm

শিগগিরই স্বস্তি ফিরবে দেশের প্রযুক্তিপণ্যের বাজারে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রযুক্তি পণ্যের জন্য বাংলাদেশ বহুলাংশেই অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় চীন থেকে। তবে করোনার কারণে দীর্ঘদিন চীন থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী দেশে আসেনি প্রযুক্তিপণ্য। এর মধ্যে আবার জাহাজ ও কন্টেইনার ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। এ অবস্থায় দেশের প্রযুক্তিরপণ্যের বাজার এখনো বেশ চড়া। করোনা স্বাভাবিক হওয়ায় বাজারে মিলছে ক্রেতাদের পছন্দের পণ্য। তবে তাদের বেশি গুনতে হচ্ছে দুই থেকে চার হাজার টাকা। ক্রেতারা সিন্ডিকেটের কথা বললেও, ব্যবসায়ীরা বলছেন আগামী জুন মাস থেকে স্বাভাবিক হতে পারে প্রযুক্তিপণ্যের বাজার। এদিকে ক্রেতারা দোকানে দোকানে ঘুরেও সাশ্রয়ী দামে পণ্য পাচ্ছেন না আবার পেলেও সেগুলোর দাম বেশি। পণ্যের দাম এখনো চড়া বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, পণ্যের সংকট কিছুটা কমেছে, তবে দাম এখনো চড়া। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ও ওয়েবক্যামের দাম বেড়েছে। ল্যাপটপের দাম বেড়েছে আড়াই থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। দুই বছরে আগেও ওয়ারেন্টিসহ চার জিবি র‌্যামের মূল্য ছিল এক হাজার টাকার মতো, সেটা এখন ১৬শ থেকে ১৮শ টাকা। ৩২ জিবি ৩.০ পেনড্রাইভের দাম ছিল ৪শ টাকা। সেটা এখন প্রায় ৬শ টাকা। এ ছাড়া হার্ডডিস্ক ৫০০ জিবির দাম ছিল এক হাজার টাকা, যা বেড়ে প্রায় ১৫শ টাকা হয়েছে। এভাবে মনিটর, এসএসডি হার্ডডিস্ক, গ্রাফিক্স কার্ডসহ প্রত্যেকটা পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের বৈশি^ক যে দাম বাংলাদেশে সে রকম হওয়ার কথা। কিছু টাকা বেশি হতে পারে শিপিং খরচের কারণে। কিন্তু বিভিন্ন কনফিগারেশনের ল্যাপটপের যে দাম চাওয়া হচ্ছে তা অনেক বেশি। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে ল্যাপটপের সংকট ছিল। তখন দাম ছিল আরও বেশি। এখন ল্যাপটপ আছে কিন্তু দাম সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা বেশি চাইছে। ক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন যেহেতু বন্ধ হয়নি সেহেতু ব্যবসায়ীরা পণ্য আনছেন। কিন্তু সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা দোষারোপ করছেন আমদানিকারকদের। তারা বলছেন, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, প্রসেসর, গ্রাফিক্স কার্ড, এসএসডি, কিবোর্ড, মাউস, প্রিন্টার, ক্যাবলসহ সব পণ্যের দাম বাড়তি। আমদানিকারকরা বলছেন, বছরের মাঝামাঝি দাম কমতে পারে। দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট বাণিজ্যকে ইঙ্গিত দিয়ে ব্যবসায়ী বলছেন, প্রত্যেক পণ্য আমদানিকারকদের কাছেই স্টক আছে। তারা বিনা কারণে স্টক করে সরবরাহ বন্ধ রাখেন। পরে যখন ব্যবসায়ীরা যখন প্রয়োজনের কথা জানান তখন তারা দাম বাড়তি রাখেন। ফলে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পণ্য কিনে ক্রেতাদের স্বল্প দামে দিতে পারছেন না। যদিও সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করছেন আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাস পুরোটাই চায়নিজ নিউইয়ারের কারণে বন্ধ ছিল। এ ছাড়া আমদানির ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। চলতি মাসে প্রযুক্তিপণ্যের বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বাজারে সরবরাহ বেড়েছে ল্যাপটপসহ অন্যান্য পণ্যের। নেটওয়ার্কিং পণ্য, রাউটার, সিকিউরিটি ক্যামেরা, গ্রাফিক্স কার্ড, প্যানেলের সংকট রয়েছে। করোনা কমছে, বাজারও শান্ত হচ্ছে। জুলাই-আগস্টে বাজার অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সদস্য ও সাইবার কমিউনিকেশনের স্বত্বাধিকারী নাজমুল আলম ভূইয়া বলেন, করোনার কারণে চায়নার বেশিরভাগ ফ্যাক্টরিই বন্ধ ছিল। তারপর চায়নিজ নিউইয়ার গেলো ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রোডাক্টশন কম কিন্তু বিশ্বব্যাপী ডিমান্ড বেশি। তিনি বলেন, চায়না থেকে ঢাকা ২০ ফুটের কন্টেইনার ভাড়া ছিল ১২ থেকে ১৫শ ডলার। সেটা আট হাজার ডলার হয়েছে। এসব কিছুর জন্য প্রযুক্তিপণ্যের দাম একটু বাড়তি। আগামী জুলাই-আগস্টের আগে আর কমবে না। চীনের উৎপাদন যদি ঠিক হয়ে যায় বছরের মাঝামাঝি বাজার স্বাভাবিক হতে পারে। সংশ্লিষ্টদের মতে, মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে অতিমারি করোনা। ঘরে বসেই অফিসের কাজ করতে হয়েছে অধিকাংশ চাকরিজীবীকে। শ্রেণিকক্ষের কাজ ও ক্লাস করতে হয়েছে অনলাইনে। ফলে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসেটসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। ল্যাপটপসহ, নেটওয়ার্কিং পণ্যের চাহিদাও বেশি ছিল করোনাকালে। ক্রেতাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে, কেননা তখন পণ্যের ঘাটতি ছিল। অন্য সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি বেচাকেনা হয়েছে। তবে এখন যে সংকট এটা খুব দ্রুত কাটবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের। এদিকে প্রযুক্তি পণ্যের পাশাপাশি দেশে ইলেকট্রনিক পণ্যেরও বিপুল চাহিদা রয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ দিতে নানা রকম ছাড় দেয় সরকার। দেশীয় ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন পণ্যে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি পেয়েছে। পণ্যগুলো হচ্ছে ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সচার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, রাইসকুকার, মাল্টি কুকার, প্রেশারকুকার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ইলেকট্রিক ওভেন। এ ছাড়া রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও তার কমপ্রেসরের উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা আরও এক বছর বেড়েছে। এয়ার কন্ডিশনার ও তার কমপ্রেসরের উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা আরও তিন বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য কর অবকাশের সুযোগ দিয়েছে সরকার। ফলে এসব পণ্যও আগের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাবে।