অনলাইন ডেস্ক :
করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি রপ্তানি আয়। তবে এর মধ্যেও রপ্তানির বড় উৎস চামড়া ও পোশাক খাতে দেখা গেছে বড় প্রবৃদ্ধি। সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার। কিন্তু রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৫ শত কোটি ডলার বেশি আয় করতে পারেনি রপ্তানি খাত। সে হিসাবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অন্যদিকে আগের বছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসাবেই প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, মহামারির প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে শ্লথ অর্থনীতি বজায় থাকায় রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে করোনাকে দুষছেন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান। তিনি বলেন, ইউরোপে গত এক বছরে তেমন বেচা-বিক্রি হয় নাই। করোনার পাশাপাশি কাচামালের দামের বাড়ার কারণে এবার রপ্তানি কমেছে। ইপিবির তথ্য বলছে, বছর শেষে দেখা গেছে তৈরি পোশাক খাতে এবারও প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ৬৭ লাখ (৩১.৪৫ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০১৯-২০ বছরের চাইতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে ৩৫৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। মে মাসে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩১১ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৪৬ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৬৯৬ কোটি ডলার। এর ফলে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৪৪৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। এ খাতে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে। ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘মিয়ানমারের বাজার আমরা খুব বেশি ধরতে পারিনি। করোনা চলে গেলে ওভেন পোশাকের রপ্তানি বাড়বে। তখন নিট ও ওভেন উভয়ই পোশাকের রপ্তানি বাড়বে আগামীতে। এ ছাড়া প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি আয়ের উৎস চামড়া খাত। করোনাকে হারিয়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপের দেশগুলোতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসায় রপ্তানি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। অন্যদিকে, হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কমেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার আয় করেছে। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ১ দশমিক ১৫ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন কৃষিপণ্য রপ্তানি করে ১০২ কোটি ৮১ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। পাট রপ্তানিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১৬ কোটি ১৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যদিও ২০১৯-২০২০ যা অর্থবছরের আয় হয়েছে ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানিতে ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম