নিজস্ব প্রতিবেদক:
সারাদেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বেহাত হচ্ছে। অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত সারাদেশের ৪শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ৩শ একর জমি ও ভৌত অবকাঠামো বেদখল হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। গত ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিদর্শনের সঙ্গে জমির পরিমাণ যাচাই-বাছাই কাজ শুরু করা হয়। তাতে মার্চ মাসে দেশের বিভিন্ন জেলার স্কুল-কলেজের ৪৫ দশমিক ১৫৮৫ একর, কারিগরি ও মাদরাসার ১৫ দশমিক ৭৮৭ একর জমি বেহাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। একই বছরের মে মাসে ১০ দশমিক ৬৭, কারিগরি মাদরাসার ৪ দশমিক ৭৭, জুনে ২৭ দশমিক ৭৩৫১৫, কারিগরি-মাদরাসার ৯ দশমিক ৮৬৯৫, জুলাইয়ে স্কুল-কলেজের শূন্য দশমিক ১৪, কারিগরি-মাদরাসার শূন্য, আগস্টে ১১ দশমিক ৫৮২৫, কারিগরি- মাদরাসার ৩ দশমিক ৩৮৫, সেপ্টেম্বরে ২ দশমিক ৯৮৭৫, কারিগরি- মাদরাসায় শূন্য দশমিক ৮৪, অক্টোবরে স্কুল-কলেজে ৫৫ দশমিক ৫৮৮, কারিগরি-মাদরাসায় ১০ দশমিক ২৫১৯, নভেম্বরে ৩ দশমিক ৭০, কারিগরি মাদরাসায় ৩ দশমিক ৭৬৮৩, ডিসেম্বরে ২৪ দশমিক ৯০৪৯ এবং কারিগরি-মাদরাসার ২১ দশমিক ১৪ একর জমি বেহাত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এভাবে ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সব মিলে সারাদেশের স্কুল-কলেজে ২৫৯ দশমিক ৯৩৩১৩ ও কারিগরি-মাদরাসার ৮৮ দশমিক ৭৮৯৩ একর জমি বেদখল হয়ে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেহাত সম্পত্তি উদ্ধারে কাজ চলছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অনুমোদনের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে পরিমাণে জমির কাগজপত্র দেখানো হয়েছে, পরে সেখানে পরিদর্শন করতে গেলে ওই পরিমাণে জমি পাওয়া যায়নি। কোথাও কোথাও পাঠদান অনুমোদন, পাঠদান স্বীকৃতি ও পরে এমপিওভুক্তি হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমির একটি অংশ বিক্রি করে দিচ্ছে। আর সম্পত্তি বিক্রির অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং কমিটি ও প্রতিষ্ঠান প্রধান মিলে ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। তাছাড়া অনেক স্থানে বিত্তশালী ব্যক্তিরা স্কুল-কলেজের জন্য বিপুল পরিমাণে জমি দান করে অন্যত্র চলে গেলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ওসব জমি দখল করে নিচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শনে জমির পরিমাণ যাচাই-বাছাইয়ে ওসব অসঙ্গতি ধরা পড়ছে।
সূত্র জানায়, ১৯৭০ সালে ঢাকার গেন্ডারিয়ায় শ্যামপুরে ফজলুল হক মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২ দশমিক ৩২ একর জমি থাকলেও বর্তমানে ১ দশমিক ০৫ একর জমি রয়েছে। এক একরের বেশি জমি বেহাত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। তাছাড়া ঢাকার রমনা, শান্তিগনগর এলাকায় ১৯৭০ সালে নয়াটোলা এইউএন মডেল কামিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। অনুমোদনের সময় ৯৩ শতাংশ জমি দেখানো হলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির জমি রয়েছে ৭১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ১৯৮৩ সালে পরিদর্শনের সময় ৮০ শতাংশ, ১৯৯৫ সালে এক দশমিক ০৫ একর আর সবশেষ পরিদর্শনে ৭১ দশমিক ৮৯ শতাংশ অর্থাৎ, ১২ শতাংশ জমির হদিস মেলেনি। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ১৭৩ জন। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় যাত্রাবাড়ী মান্নান হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ। অনুমোদনের সময় প্রতিষ্ঠানের নামে ৫৯ দশমিক ২৮ শতাংশ জমি খারিজ করা হয়। আরও ২৬ দশমিক ৪০ শতাংশ জমি প্রতিষ্ঠানের নামে কিনতে তহবিল থেকে ব্যয় করা হয় ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু পরিদর্শনে সেখানে ৮৪ দশমিক ৯০ শতাংশের বদলে ৩০ শতাংশ জমির অস্তিত্ব মিলেছে। বাকি জমির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। শুধু ঢাকার ওসব প্রতিষ্ঠানই নয়, দেশের প্রায় ৪শ এমপিওভুক্ত ও নন-এপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত কাঠামোর আংশিক বা অধিকাংশ জমি বেহাত হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সময় জমি বেহাতের এমন প্রমাণ মিলেছে।
এদিকে এ বিষয়ে ডিআইএ’র পরিচালক আজমতগীর জানান, তদন্ত কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি বেহাত হওয়ার প্রমাণ পাচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ আগে পাওয়া যায়নি বলে গুরুত্ব দেয়া হতো না। বর্তমানে কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছেন। এ পর্যন্ত দেশের অনেক স্কুল-কলেজ, কারিগরি ও মাদরাসার ৩৪৮ একরের বেশি জমি বেহাত হয়ে গেছে। ওসব প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে অনুমোদনের সময় কত ছিল আর বর্তমানে কতটা জমি রয়েছে তা নির্ণয় করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেসব সম্পত্তি বেহাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে সেসব উদ্ধারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২