হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের একটি গুদাম থেকে সাড়ে চার হাজার ৫৭৩ লিটার সয়াবিন তেল পাচারের সময় জব্ধ করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে উপজেলার লালমিয়া বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
এসময় অবৈধভাবে মজুত করার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে এবং প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আটক সুমন রায় (২৯) আজমিরীগঞ্জ পৌর এলাকার সমিপুর গ্রামের সনদ কুমার রায়ের ছেলে এবং নেপাল বৈদ্য (৩২) একই গ্রামের গোপাল বৈদ্যর ছেলে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গলের ব্যবসায়ী কৃপেশ রায় মাস দুয়েক আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী সুমন রায়ের মাধ্যমে আজমিরীগঞ্জ লালমিয়া বাজারে একটি গুদাম ঘর ভাড়া নিয়ে সয়াবিন তেল মজুত করে রাখেন। বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে ট্রাকে করে তেল হবিগঞ্জ নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসীর নজরে আসে। একপর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে খবরটি পৌঁছে। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শফিকুল ইসলাম রাত সাড়ে এগারোটায় ঘটনাস্থলে গিয়ে রাজমা ব্রান্ডের ৫ লিটারের ৬৬৫ বোতল ও বসুন্ধরা গ্রুপের মহারানী (১ লিটারের) এক হাজার ২৪৮ বোতল সয়াবিন তেল জব্দ করেন।
এদিকে রাত সাড়ে বারোটায় সহকারি কমিশনার শফিকুল ইসলাম গুদামেই নিলামের আয়োজন করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,এসময় প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছিল।ওই সময়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ছাড়া অল্প কয়েকজন লোক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ভ্যাটসহ চার হাজার পাঁচশত ৭৩ লিটার সয়াবিন তেল চার লাখ ৭৩ হাজার চারশত টাকায় উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য কবির মিয়া কিনে নেন। সে হিসেবে প্রতি লিটারের মূল্য পড়েছে ১০৩ টাকা।
স্থানীয় ক্রেতারা জানান, রাজমা ব্রান্ডের পাঁচ লিটার বোতলে ৭৭০ ও বসুন্ধরার এক লিটারের বোতলে ১৫৭ টাকা লেখা রয়েছে।
রাতের আঁধারে নিলামকে কেন্দ্র করে এলাকার ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
লালমিয়া বাজারের এক ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া বলেন,এই নিলামের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ঝড়ের সময় গুদামের দরজা বন্ধ করে নিলামে প্রতি লিটার একশ’ তিন টাকায় বিক্রি করা হয়। পরদিন সকালে ওই তেল আমাদেরকে ঠিকই ১৫৪ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লালমিয়া বাজারের আরেক ব্যবসায়ী জানান, নিলামের সময় আমাদেরকে ওই গুদামে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তার অভিযোগ একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দেয়ার জন্যই তরিঘড়ি করে নিলাম করা হয়েছে।
শ্রমিক সুজাত মিয়া বলেন, কি কারণে রাতের আধারে নিলাম করা হল তা বুঝতে পারছি না। সকালে নিলাম করা হলে সরকার আরও বেশি রাজস্ব পেত।
কুতুব মিয়া নামে একজন ক্রেতা বলেন, বোতলের গায়ের রেটে খোলা বাজারে বিক্রি করা হলে সরকার প্রায় আড়াই লাখ টাকা বেশি পেত।
ক্রেতাদের অভিযোগ যুবলীগ নেতা কবীর এক লিটারের বোতল সরিয়ে ফেলেছেন। সকালে অনেক ক্রেতা এক লিটার সয়াবিন কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি শেষ হওয়ার পর এক লিটারের বোতল বিক্রি করবেন বলে ক্রেতাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.শফিকুল ইসলাম বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই নিলামে তেল বিক্রি করা হয়েছে।
নিলামে ৯ জন অংশ নেন দাবি করে তিনি বলেন, কবিরকে বোতলে গায়ের মূল্যে তেল বিক্রি করতে বলা হয়েছে। খোলা বাজারে তেল বিক্রির সময় কোনো অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি