নিজস্ব প্রতিবেদক :
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ নির্মিত আবাসিক ভবনের ছোট ফ্ল্যাটের আশানুরূপ ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিপুলসংখ্যক ফ্ল্যাট বিক্রি না হওয়ায় দুটি ভবনে ছোট ফ্ল্যাট বাদ দিয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষবড় ফ্ল্যাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংস্থাটি ঢাকার মিরপুরে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য দেড় হাজারের বেশি ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। ১৫টি বহুতল ভবনে বড়, মাঝারি ও ছোট আয়তনের ফ্ল্যাটগুলো গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফ্ল্যাট বরাদ্দ কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। কিন্তু ৮৭৮ বর্গফুট আয়তনের ছোট ফ্ল্যাটগুলোর প্রয়োজনীয়সংখ্যক ক্রেতা মিলছে না। ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণের বেজলাইন সার্ভে ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করার কারণে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টদের অনেকে মনে করেন। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বপ্ননগর দ্বিতীয় পর্ব নামে মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৫৬০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। বড় ফ্ল্যাটগুলোর আয়তন ১ হাজার ৫৪৫ বর্গফুট। মাঝারি ও ছোট ফ্ল্যাটগুলোর আয়তন যথাক্রমে ১ হাজার ৩৩৮ ও ৮৭৮ বর্গফুট। স্বপ্ননগর দ্বিতীয় পর্ব আবাসন প্রকল্পে ৭২৮টি বড়, ৪১৬টি মাঝারি ও ৪১৬টি ছোট ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। সে অনুযায়ী ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ ও ফ্ল্যাট বরাদ্দের প্রক্রিয়াও শুরু হয়। তবে শুরু থেকেই বড় ও মাঝারি ফ্ল্যাটগুলোর চাহিদা থাকলেও ছোট ফ্ল্যাটের জন্য গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয়সংখ্যক আবেদনই পায়নি। সেজন্য দুটি ভবনে ২০৮টি ছোট ফ্ল্যাটের বদলে ১ হাজার ৫৪৫ বর্গফুটের বড় ফ্ল্যাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে সংস্থাটি নির্মাণ কাজ চলমান থাকা বাকি ২০৮টি ছোট ফ্ল্যাটের বরাদ্দ কার্যক্রমও চালু রাখে।
সূত্র জানায়, এখনো বরাদ্দ হয়নি স্বপ্ননগর দ্বিতীয় পর্ব আবাসন প্রকল্পের ২০৮টি ছোট ফ্ল্যাটের মধ্যে ৯০টি। তিন দফা বিজ্ঞপ্তি দিয়েও এ ফ্ল্যাটগুলোর ক্রেতা মিলছে না। ওই প্রকল্পের একটি বড় ফ্ল্যাটের মূল্য ধরা হয়েছে ৮১ লাখ ১১ হাজার টাকা। ১ হাজার ৩৩৮ বর্গফুটের মাঝারি ফ্ল্যাটগুলোর একেকটির দাম ৬৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। আর ছোট ফ্ল্যাটগুলোর দাম ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। পাশাপাশি নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাটের দামও বাড়তে পারে বলে প্রসপেক্টাসে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্রেতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ করে মাত্র ৮৭৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় প্রকল্পের ছোট ফ্ল্যাটগুলো অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিপুলসংখ্যক ফ্ল্যাট অবিক্রীত থেকে যাওয়ায় ভবনগুলো নির্মাণের আগে বেজলাইন সার্ভে ও ভিজিবিলিটি স্টাডি না করাকে দায়ি করছে। প্রকল্পটি নিয়ে করা আইএমইডি’র নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ৪টি ভবনে সব মিলিয়ে ৪১৬টি ৮৭৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাস্তবে ৮৭৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাটগুলোর চাহিদা কম। ২০৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে এখনো ৯০টি বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হয়নি। মূলত চাহিদার কারণেই পরিকল্পনা বদলে আরো ২০৮টি ফ্ল্যাট ৮৭৮ বর্গফুটের বদলে ১ হাজার ৫৪৫ বর্গফুটের নির্মাণ করা হচ্ছে। যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হলে এ সমস্যা হতো না। পাশাপাশি আইএমইডির প্রতিবেদনে কয়েকটি ভবন নির্মাণে নিম্নমানের ইট ও পাথর ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে। সরেজমিন পরির্দশনে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত পাথর নিম্নমানের পাওয়া গেছে। ভবনগুলোর নকশা, নির্মাণকাজ, নির্মাণ উপকরণ, শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক বিষয়েও ত্রুটি পেয়েছে আইএমইডির পরিদর্শক দল।
অন্যদিকে নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার প্রসঙ্গে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ারদার তাবেদুন নবী জানান, যে ভবনগুলোয় নিম্নমানের ইট ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন কোনো ঠিকাদার এ রকম কিছু করতে না পারেন সেজন্য তদারকি বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বপ্ননগর দ্বিতীয় পর্ব আবাসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মইনুল হক আনছারী জানান, ফ্ল্যাটের ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না ধারণা ভুল। সব ফ্ল্যাটই বরাদ্দ দেয়ার কার্যক্রম চলমান আছে। আর চাহিদার কারণেই ২০৮টি ফ্ল্যাটের আয়তন বাড়ানো হয়েছে। যে দুটি ভবনে ফ্ল্যাটের আয়তন বাড়ানো হচ্ছে, সে দুটি ভবনের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ছিল, যা কাজে লাগানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি