নিজস্ব প্রতিবেদক :
উচ্চ আদালতে রাজস্ব সংক্রান্ত হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আর ওসব মামলায় বিপুল অংকের রাজস্ব আটকে রয়েছে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগে (আপিল ও হাইকোর্ট) বিচারাধীন প্রায় ৯ হাজার মামলা। তার মধ্যে হাইকোর্টে রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ৬০৫টি আপিল বিচারাধীন। ওসব মামলায় জড়িত রয়েছে ৪ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা রাজস্ব। আর হাইকোর্টে ৫ হাজার ৩৪৭টি রিট আবেদনের বিপরীতে রাজস্ব আটকে রয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া ট্যাক্স ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ২ হাজার ৭৮৮টি আপিল আবেদন বিচারাধীন। সেখানেও ৩ হাজার ২৩২ টাকা রাজস্ব আটকে রয়েছে। সব মিলিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ওসব রাজস্ব মামলায় আটকে রয়েছে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব। এনবিআর এবং আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিচারাধীন রাজস্ব মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে এবার প্রধান বিচারপতি উদ্যোগ নিয়েছেন। আর রাজস্ব মামলার শুনানিতে আদালতকে সহায়তা করতে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ও গঠন করেছে বিশেষ আইনজীবী প্যানেল। ৫ সদস্যের ওই প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অ্যাটর্নি জেনারেল নিজেই। রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে হাইকোটের্র ৪টি দ্বৈত বেঞ্চকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তবে বর্তমানে করোনার কারণে হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চ বন্ধ থাকায় রাজস্ব মামলার শুনানিও আটকে আছে। তবে সশরীরে বা ভার্চুয়াল পদ্ধতি যে কোনোভাবে হাইকোর্টের স্বাভাবিক বিচার কাজ শুরু হলেই রাজস্ব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে জানা যায়। হাইকোর্টের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল দ্রুত নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চে নিয়মিতভাবে নিষ্পত্তি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উচ্চ ও নিম্ন আদালতে দায়েরকৃত মামলার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ওসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ নিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি এনবিআর দেয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষে ওসব মামলা পরিচালনা করতে বিশেষ আইনজীবী প্যানেল গঠন করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দাবি করা ভ্যাট বা ট্যাক্স নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে এনবিআরের অ্যাপিলেড ট্রাইব্যুনালে আবেদন বা উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা যায়। রিট দায়েরের পর উচ্চ আদালত আবেদন খারিজ করে এনবিআরে পাঠাতে পারে। সেক্ষেত্রে এনবিআরের অ্যাপিলেড ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হয়। সেজন্য দাবিকৃত অর্থের ১০ শতাংশ পরিশোধ করতে হয়। অ্যাপিলেড ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজনীয় শুনানি শেষে রায় দেয়। তারপর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ফের উচ্চ আদালতে আপিল করে। আর এভাবেই গড়িয়ে যায় বছরের পর বছর। এনবিআরের অ্যাপিলেড ট্রাইব্যুনালের আওতায় আয়কর খাতের জন্য ৭টি বেঞ্চ এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও শুল্ক খাতের জন্য ৩টি বেঞ্চ রয়েছে। ওসব বেঞ্চে অ্যাপিলেড ট্রাইব্যুনালের দুটি শাখায় মামলা-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম শুনানি ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।
রাজস্ব সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানান, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকেও আদালতকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। যাতে দ্রুত শুনানি ও নিষ্পত্তি হয়। ওসব মামলার কারণে সরকারের রাজস্ব আদায় বন্ধ রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হলে সরকার রাজস্ব আদায় করতে পারবে। তখন বহুগুণে রাজস্ব আদায় বাড়বে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক