November 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, June 5th, 2022, 10:14 pm

চট্টগ্রাম বন্দরের পড়ে রয়েছে অকশনে বিক্রির মতো পণ্যভর্তি হাজার হাজার কনটেইনার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে অলস পড়ে রয়েছে অশশনে বিক্রির মতো পণ্যভর্তি হাজার হাজার কনটেইনার। ওসব পণ্য আমদানিকারকরা নির্ধারিত সময়ে ডেলিভারি নেয়নি। ওসব কনটেইনারের মধ্যে প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন আমদানি পণ্য রয়েছে। পাশাপাশি খোলা পণ্য রয়েছে প্রায় ১১ হাজার টন। বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী পণ্য ডেলিভারিতে প্রথমে ৪দিন ফ্রি টাইম দেয়া হয়। তারপরে কয়েক দফায় পেনাল্টি আরোপের মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য ছাড়িয়ে নেয়ার বিধান রয়েছে। তারপরও কোন আমদানিকারক পণ্য ছাড়িয়ে না নিলে তা কাস্টমসের নিয়ন্ত্রণে অকশন শেডে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অকশন শেড থেকে নিলামে বিক্রীত পণ্যের ২০ শতাংশ অর্থ বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেয়ার নিয়ম রয়েছে। প্রতিমাসেই রুটিন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে কোন কোন পণ্যবোঝাই কনটেইনার নিলামে যাবে তা জানিয়ে দেয়। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বিভিন্ন পণ্যের আমদানির বিপরীতে নিয়মিত বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ডলার আকারে বিদেশে চলে যায়। বিপরীতে বেশ কিছু পণ্য আসে যা বিভিন্ন কারণে ছাড় না হয়ে বন্দরে পড়ে থাকে এবং তা থেকে অকশনে চলে যায়। আর সেখানে বিহিত ব্যবস্থা না হলে শুধু পচনশীল নয়, লৌহজাত পণ্যও নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ওসব পণ্যের বিপরীতে পাঠানো ডলার অহেতুক রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে চলে যায়। বর্তমানে দেশের আমদানি-রফতানির ৯২ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবাহিত হয়। ওই বন্দরে বর্তমানে বছরে প্রায় ৩২ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। কিন্তু আমদানির পণ্যবোঝাই কনটেইনারের একটি অংশ প্রথমে ফ্রি টাইম এবং পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডেলিভারি না হলে তা কাস্টমসের নিয়ন্ত্রণে অকশন শেডে প্রেরণ করা হয়। কাস্টম কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে সেখান থেকে বিভিন্ন পণ্য অকশনে বিক্রি করার তৎপরতা চালায়। কিন্তু ওসব পণ্যের বিপরীতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে গেছে তা আর তুলে আনা সম্ভব হয় না। কারণ ওসব পণ্য নষ্ট হয়ে বহু কমমূল্যে বিক্রি হয়।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড এবং শেডগুলোতে প্রায় ৫ হাজার কনেটইনারে হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। ওসব পণ্যের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ ডলার বিদেশে চলে গেছে। অথচ ওসব পণ্য দ্রুততম সময়ে ছাড় করে বাজারে ছাড়া হলে পণ্যের মূল্যের উর্ধগতি যেমন হ্রাস পেতে বাধ্য, তেমনি আমদানি পণ্য নষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক সুফল নিশ্চিতভাবে বয়ে আনতো। বন্দরে পণ্য খালাস প্রক্রিয়াতে আরো উন্নতি সাধন করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ করার পাশাপাশি পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়াও অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের অকশন শেডে বেশ কিছু বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে উঠেছে। ওসব গাড়ি আমদানির বিপরীতে যে পরিমাণ ডলার বিদেশে চলে গেছে নিলামে ওই পরিমাণ অর্থ উঠানো যাবে না। নানা কারণে বর্তমানে বিশ^জুড়ে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন অবস্থায় দেশে আমদানি পণ্য এনে তা খালাস করে বাজারে ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। তাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অক্ষুণœ রাখার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আনবে।
সূত্র আরো জানায়, বন্দর ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানি পণ্যের গোডাউন নয়। আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড বা শেডগুলো একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এদেশের আমদানিকারকদের বড় একটি অংশ বন্দরে পণ্য রেখেই তা বিক্রি করার তৎপরতা চালায়। তাতে বিভিন্ন ধরনের রেন্ট প্রদান করে যে পণ্য বাজারে আসে তা ভোক্তাদের ওপরই চাপিয়ে দেয়ার রেওয়াজ বিদ্যমান। তাতে করে বাজারে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়।