November 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, June 8th, 2022, 7:47 pm

দু’বছর ধরে বন্ধ জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের ইমিগ্রেশন, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দুই বছর আগে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ সারা দেশের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলো সরকার বন্ধ করে দেয়। সরকারি নির্দেশনা পেয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ স্থল শুল্ক স্টেশনের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়েও পুরোপুরিভাবে যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দেয়া হয়।

বর্তমানে করোনা সংক্রমণ কমে আসায় দেশের সব সীমান্ত পথ খুলে দেয়া হলেও জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার এখনও বন্ধ রয়েছে। এ চেকপোস্ট দিয়ে ভারত যাওয়ার উদ্দেশে প্রতিদিন ভিসা নিয়ে অনেক যাত্রী জকিগঞ্জ স্টেশনে আসে। কিন্তু যেতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। প্রস্তুতি নিয়ে স্টেশনে এসেও ভারতে যেতে না পারায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন যাত্রীরা। জরুরি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা ঘুরে অন্য ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাচ্ছেন। এ নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ঘুরতে ইচ্ছুক ভ্রমণপিপাসুরা।

ব্রিটিশ আমল থেকে চালু থাকা এ স্টেশন দিয়ে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। তবে আমদানি-রপ্তানি অব্যাহত আছে।

এ চেকপোস্ট দিয়ে চিকিৎসা, পড়াশোনা, ভ্রমণ ও ব্যবসার জন্য পাসপোর্টধারী যাত্রীরা ভারত-বাংলাদেশে চলাচল করেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ফলে বর্তমানে দেশের সব সীমান্ত পথ খুলে দেয়া হলেও শুধু জকিগঞ্জ স্থলবন্দরটি বন্ধ রয়েছে। কী কারণে বন্ধ রয়েছে স্টেশনে কর্তব্যরতদের কাছ থেকেও সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এতে সিলেট ও ভারতের আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, ত্রিপুরাসহ কয়েকটি রাজ্যে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ভারতে চিকিৎসা নেয়া অসুস্থ লোকজনও এ স্টেশন দিয়ে ভারতে যেতে না পেরে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরাও ভারত থেকে মালামাল ক্রয় করে লোকসান গুণছেন।

স্টেশনটির কয়েক গজের মধ্যেই রয়েছে জকিগঞ্জ থানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক। অপরদিকে, সীমান্তরেখা কুশিয়ারা নদীর ওপারেই রয়েছে ভারতের জেলা শহর করিমগঞ্জ।

জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, করিমগঞ্জেও নিরাপত্তাজনিত এবং যোগাযোগের সকল সুযোগ-সুবিধা হাতের নাগালেই রয়েছে। এ জন্যই ব্রিটিশ আমল থেকে জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে।

জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম যথারীতি চালুর দাবিতে সম্প্রতি সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আকরাম আলী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন।

আকরাম আলী এ ব্যাপারে বলেন, এ স্টেশনের কার্যক্রম ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর চালু হয়। তখন থেকে শুল্ক স্টেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে। কিন্তু যাত্রীরা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এ চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যেতে পারছেন না।

ভারতে চিকিৎসা নেয়া একজন পাসপোর্টধারী যাত্রী বলেন, অসুস্থতার কারণে ভারতে গিয়ে একজন ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন। কিন্তু জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে যেতে পারছি না। অন্য এলাকা দিয়ে ঘুরে যেতে আমার খুব সমস্যা হবে।

ভারতে পড়াশোনা করার জন্য যেতে চান এক শিক্ষার্থী। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে গেলে সময় এবং খরচ কম হয়। সেই সঙ্গে বিড়ম্বনায়ও পড়তে হয় না। কিন্তু জকিগঞ্জ চেকপোস্ট দিয়ে গত দুই বছর ধরে ভারতে যেতে পারছি না। ভারতে যেতে হলে অন্য এলাকা দিয়ে ঘুরে যেতে হয়। এতে সময় যেমন বেশি লাগে, অন্যদিকে টাকাও বেশি খরচ হয় এবং বিপাকেও পড়তে হয়।
কয়েকজন আমদানিকারকও এই স্থলবন্দর খুলে দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তারা বলেন, জকিগঞ্জ স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করেন। এসব পণ্য ভারতে গিয়ে দেখে-শুনে কিনতে হয়। সে ক্ষেত্রে ভারতে যাওয়া খুবই জরুরি। কিন্তু ভারতে যেতে হলে অন্য চেকপোস্ট দিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগে। জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন দিয়ে আগের মতো যেতে পারলে সময় কম লাগত এবং খরচ বাঁচত। ব্যবসায় লোকসান গুণতে হতো না।

জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, জকিগঞ্জ স্টেশনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কী কারণে যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে তা আমাদের জানা নেই।

তবে আরেকটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যাত্রী গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

—ইউএনবি