নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনেরই ট্রেড লাইসেন্স খাতে রাজস্ব হ্রাস পেয়েছে। কারণ করোনা মহামারীতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আয় কমে যাওয়ায় অনেকেই ট্রেড লাইসেন্স না নেয়ার পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তা নবায়ন করছে না। ফলে কমে যাচ্ছে সিটি করপোরেশনগুলো আয়। এমন পরিস্থিতির জন্য ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে অতিরিক্ত আয়কর ও ভ্যাটকে দায়ি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ট্রেড লাইসেন্সের ওপর কর প্রত্যাহার করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের বিপরীতে আয়কর ও ভ্যাট আদায়ে সিটি করপোরেশন বাধ্য নয় উল্লেখ করে এনবিআরকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায়ের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও এনবিআরকে চিঠি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যদিও রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনই লাইসেন্সের বিপরীতে এনবিআরকে শত শত কোটি টাকা আয়কর আদায় করে দিচ্ছে। কিন্তুআইনগত সিটি কর্পোরেশনের এর বাধ্যবাধতা নেই। পাশাপাশি আদায়কৃত আয়করের একটা অংশ সিটি করপোরেশনকে দেয়া উচিত বলেও সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২ লাখ ৩২ হাজার ৯৭৭টি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। পাশাপাশি নতুন ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ায় লাইসেন্সের আওতার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ওসব এলাকায় অধিকাংশ ব্যবসায়ীই ক্ষুদ্র পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করছে। ফলে ওসব ব্যবসায়ীর পক্ষে ট্রেড লাইসেন্স ফি’র সঙ্গে ৩ হাজার টাকা আয়কর দেয়া কষ্টকর। সেজন্য অনেকেই ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে আগ্রহী হচ্ছে না। তাতে সিটি করপোরেশনের নিয়মিত ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায়ও সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ অনুযায়ী দেশের যে কোনো জায়গায় ২৬৫ ধরনের ব্যবসা করতে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। সেজন্য প্রতিবছর নির্দিষ্ট হারে ফি আদায়যোগ্য। বর্তমানে ওই ট্রেড লাইসেন্স ফি’র ওপর ৩ হাজার টাকা আয়কর এবং ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত আছে। বিগত ২০০৭ সালে এনবিআর সর্বপ্রথম ট্রেড লাইসেন্সের ওপর ৫০০ টাকা উৎসে কর আরোপ করে। পরে ২০১৯ সালের বাজেটে তা বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়। লাইসেন্স ফি ৫০০ টাকা হোক বা ৫০ হাজার টাকা, ছোট-বড় নির্বিশেষে সব ব্যবসায়ীকে ৩ হাজার টাকা উৎসে আয়কর এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জাল টিআইএনের (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে। শুধু তাই নয়, রিটার্ন জমার সংখ্যা বাড়াতে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের সময় টিআইএনের পরিবর্তে রিটার্ন জমা প্রাপ্তি স্বীকারপত্র বাধ্যতামূলক করতে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সেজন্য ইতিমধ্যে এনবিআরের পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে দুই সংস্থার ডাটাবেজের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, করোনায় ক্ষুদ্র দোকানদার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। দীর্ঘদিনের বিধি-নিষেধে তাদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে হয়েছে। ওই বিবেচনায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে উৎসে কর, ভ্যাট ও বিলম্ব জরিমানা মওকুফ করা প্রয়োজন। আর এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে ব্যবসায়ীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে নতুন লাইসেন্স নেবে ও পুরনো লাইসেন্স নবায়ন করবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি