অনলাইন ডেস্ক :
সংসদে পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের ‘তৎপরতা’র বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এখনও ভুগতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
অন্য দিকে, বিএনপির সংসদ রুমিন ফারহানা বলেন ‘অবিশ্বাস্য নির্মাণ ব্যয়ের’ একটি গল্প টেনে বলেন, লিথুয়ানিয়ার কৌনাস পৌরসভার ‘গোল্ডেন টয়লেটের’ মতো পদ্মা সেতু হবে বাংলাদেশের ‘গোল্ডেন ব্রিজ’।
জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গত বুধবার জাতীয় সংসদে আনা প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে রুমিন ফারহানা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “লিথুয়ানিয়ার কৌনাস পৌরসভার মেয়র শহরে একটি টয়লেট নির্মাণ করেছিলেন দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে। কাছাকাছি একটি টেনিস ক্লাবে একই ধরনের টয়লেট বানায় সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে। সেই কারণে মানুষ মজা করে সে টয়লেটকে বলত গোল্ডেন টয়লেট।
“একই রকম বা একটু বেশি দৈর্ঘ্যের অন্যান্য সেতুর সঙ্গে পদ্মা সেতুর মডেলের তুলনা করে, পদ্মা সেতুকে আমরা বলতেই পারি গোল্ডেন ব্রিজ। বাংলাদেশ গোল্ডেন ব্রিজ কেসও দুর্নীতির টেক্সটবুক এক্সাম্পল হয়ে থাকবে।”
রুমিন পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “ভারত, চীন, মালয়েশিয়ায় প্রতি কিলোমিটার সেতু তৈরি করতে খরচ পড়ে ৫শ’-৭শ’ কোটি টাকা। ঘরের পাশে ভূপেন হাজারিকা সেতুর দিকে তাকালে ৯ কিলোমিটারের সেতুতে নির্মাণ ব্যয় ১১শ’ কোটি রুপি। অর্থাৎ ভারতে একটা পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় দিয়ে ৩০টা ভূপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণ সম্ভব। ভারতে ১০ কিলোমিটারের যে সেতু নির্মাণ হচ্ছে ছয় লেন বিশিষ্ট, সে সেতুর খরচ হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকা। লুটপাট আর কাকে বলে!”
পরে, পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে সংসদে তোলা প্রস্তাবের উপর আলোচনায় দাঁড়িয়ে নিজের বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনূসের নাম না নিয়ে দীপু মনি বলেন, “আইনের কাছে তিনি বেআইনি কাজ করায় হেরে গিয়ে এতটাই ক্ষুব্ধ হন যে শেখ হাসিনার সরকার, ব্যক্তি শেখ হাসিনা, তার পরিবার, তার বোন শেখ রেহানা এমনকি সরকার পক্ষের যিনি আইনজীবী ছিলেন, তার প্রতিও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেন।
“দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, কিছু মহলের প্রতিহিংসাপরায়ণতা এখনও প্রশমিত হয়নি। সেই আইনজীবীর স্ত্রী হিসেবে তাদের প্রতিহিংসার আগুনে আমাকে এখনো পুড়তে হয়।”
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ হারানোর পর পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে ইউনূস তৎপরতা চালিয়েছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবারই বলে আসছেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের পদে থাকতে ইউনূস যে আইনি লড়াই চালিয়েছিলেন, সেই মামলায় তার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন দীপু মনির স্বামী তৌফিক নেওয়াজ।
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংক যখন পদ্মা সেতু থেকে অর্থায়ন ফিরিয়ে নেয়, তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন দীপু মনি।
সেই সময়কার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যারা আমাদের মতো উন্নয়নের জন্য সংগ্রামরত দেশগুলোকে প্রতিনিয়ত স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার ছবক দেন, তাদের নেতৃস্থানীয় একটি রাষ্ট্রের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত এবং তাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রায় উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আসেন।
“স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবার জন্য নয়, আসেন স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অনুসন্ধানের যে কাজ আমরা হাতে নিয়েছিলাম তাকে বন্ধ করে দিতে। দুর্নীতির অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করতে নয়। দুর্নীতির অনুসন্ধানকে বরং বন্ধ করে দিতে তারা চাপ প্রয়োগ করতে আসেন। স্বাভাবিকভাবেই এ রকমের কোনো অযাচিত অন্যায় চাপের কাছে শেখ হাসিনা সরকার নতি স্বীকার করেনি, করতে পারে না।”
আরও পড়ুন
গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই: জামায়াতের আমীর
জুলাই-আগস্ট বিদ্রোহে ৮৭৫ জন শহীদের মধ্যে ৪২২ জনই বিএনপির: ফখরুল
সাভারে আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতা নাঈমকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ