নিজস্ব প্রতিবেদক :
কভিডকালে চার্টার্ড ফ্লাইট থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূলত বিমানের স্টেশনগুলোর মধ্যে সঠিক সমন্বয়হীনতার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত প্রায় এক বছরে চার্টার্ড ফ্লাইড থেকে বিমানের অনাদায়ী রয়েছে আয়ের ৮২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষিতে গত বছর থেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত বছর মার্চ থেকে একে একে বন্ধ হতে থাকে বিমানের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব রুটের ফ্লাইট। আর ফ্লাইট না থাকায় গত বছর এপ্রিলের শুরুতে বিমানে যাত্রী পরিবহন শূন্যে নেমে আসে। এমন পরিস্থিতিতে বিমান কর্তৃপক্ষ বিপুল পরিচালন ব্যয় সামলাতে বিকল্প আয়ের সন্ধানে চার্টার্ড ফ্লাইট শুরু করে। কিন্তু সমন্বয় না থাকায় চার্টার্ড ফ্লাইট থেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত বিমান ২৩০টি চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করে। সেখান থেকে নমুনা ভিত্তিতে ৭৪টি কার্গো ফ্লাইট এবং ১১টি যাত্রীবাহী ফ্লাইটের অর্থ আদায়ের প্রয়োজনীয় তথ্য নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু নিরীক্ষায় দেখা যায়, বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চার্টার্ড ফ্লাইটের অর্থ জমা হয়েছে। বিশেষ করে কার্গো হিসাব শাখা কর্তৃক চার্টার্ড ফ্লাইটের টাকা কাউন্টার সেল হিসেবে জার্নাল ভাউচার (জেবি) দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ স্টেশনে চার্টার্ড ফ্লাইটের টাকা আদায়ের জেবি যথাযথভাবে না লেখায় অর্থ আদায়ের বিষয়টি যাচাই করা যায়নি। কোনো কোনো কার্গো ফ্লাইটের ডেসটিনেশনের কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ ভাড়াগ্রহীতার থেকে আদায়যোগ্য হলেও তা করা হয়নি। আবার অনেক স্টেশনের সঙ্গেই সেক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব দেখা গেছে। তাতেত আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমান।
সূত্র জানায়, গুয়াংজু সুপারপাওয়ার লজিস্টিক লিমিটেড এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মধ্যে হওয়া চার্টার্ড চুক্তির ধারা ৫ অনুযায়ী গুয়াংজুতে প্রদত্ত যাবতীয় কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের অর্থ ভাড়াগ্রহীতা থেকে আদায়যোগ্য। কিন্তু চার্টার্ড ফ্লাইটের কার্গো হ্যান্ডলিং বিলের নমুনা নিরীক্ষায় দেখা যায় সেখানে পরিচালিত বেশকিছু চার্টার্ড ফ্লাইটের কার্গো হ্যান্ডলিং বাবদ পরিশোধিত বিল ভাড়াগ্রহীতা থেকে আদায় করা হয়নি। তাছাড়া বিমান গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের বহনে ৩৩টি চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। তবে তার মধ্যে মাত্র একটি ফ্লাইটের টাকা আদায় করেছে বিমান। জাতিসংঘের চার্টার্ড করা ৩২টি ফ্লাইটের অর্থ এখনো আদায় হয়নি। ওই বাবদ বিমানের প্রায় ৮২ কোটি টাকা অনাদায়ী রয়েছে। তবে বিমান সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্ধারিত সময়ে বিল না পাঠানোর কারণে অর্থ আদায়ে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০২০ সালের এপ্রিলের বিল চলতি বছর পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিমানের নিরীক্ষা বিভাগ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের বহনে পরিচালিত চার্টার্ড ফ্লাইট ছাড়াও কার্গো পণ্য বহনে পরিচালিত চার্টার্ড ফ্লাইট, ব্যাংকক স্টেশন থেকে পরিচালিত চার্টার্ড ফ্লাইট এবং ঢাকা-আবুধাবিতে পরিচালিত বেশকিছু চার্টার্ড ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও অসঙ্গতি পেয়েছে। বিমানের ব্যাংকক স্টেশনে পরিচালিত চার্টার্ড ফ্লাইটগুলোর কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জের নমুনা পরীক্ষা করে চার্জ যথাযথভাবে আদায় না করার তথ্য পাওয়া যায়। করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর গত বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি আয়ের পথে যেতে শুরু করে বিমান। ওই সময় থেকে বিমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফেরত আনতে চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। প্রথমে ভারত, তারপর মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, জাপান থেকে যাত্রী নিয়ে আসা হয়। একই সঙ্গে ঢাকা থেকেও ইতালি, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেনে একাধিক চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। তাছাড়া বিমান যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন রুটে পণ্য পরিবহনও শুরু করে। গত বছর এপ্রিল থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত ৩ মাসে ১০৯টির বেশি চার্টার্ড ও কার্গো পণ্যবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান। ওসব ফ্লাইট থেকে ওই সময় ২৩৪ কোটি টাকা আয় হয়। তার মধ্যে এপ্রিলে ৪০ কোটি, মে মাসে ৯৪ কোটি ও ২৫ জুন পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকা আয় করে বিমান।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী জানান, বিমানের চার্টার্ড ফ্লাইটের বকেয়া বিল আদায়ের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিমানের একটি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। পর্ষদ সদস্যরা এসব নজরদারির মধ্যে রেখেছে। যথাসময়ে বকেয়া অর্থ আদায় হবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি