অনলাইন ডেস্ক :
বয়সভিত্তিক পর্যায়ে এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। সেরা খেলোয়াড়, কিংবা সেরা গোলদাতার পুরস্কার জিতছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কেউ। অর্জনের স্মারক নিয়ে গ্যালারির কাছাকাছি যাচ্ছেন সমর্থকদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। ফুটবলপ্রেমীরা আঁখি, রিপা, মারিয়া, কিংবা সাবিনা বলে চিৎকার, উল্লাস করছেন। সিনিয়র দলেও একই দৃশ্য এবার দেখা গেল কমলাপুর স্টেডিয়ামে। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে রোববার দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ৬-০ গোলে জয়ের সুবাদে দুই ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নিয়েছে গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। দুই গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছেন আঁখি খাতুন। সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন মারিয়া মান্দা। দুজনের নাম ঘোষণার সময় দফায় দফায় গ্যালারিতে ‘আঁখি’, ‘মারিয়া’ স্লোগানে কেঁপে উঠেছে। সমর্থকদের সঙ্গে আনন্দও ভাগাভাগি করেছেন তারা। সিরিজ হারলেও খোশমেজাজে ছিল মালয়েশিয়ার খেলোয়াড়রা। তাদের সঙ্গেও ছবি তুলেছেন সানজিদাসহ দলের অনেকে। এত তৃপ্তির ফাঁকেও দ্বিতীয় ম্যাচে গোল না পাওয়ার হতাশা নেহাত কম নয়। টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের মুকুট জেতা মারিয়ার দুষলেন প্রতিপক্ষের অতি-রক্ষণাত্মক কৌশলকে। “প্রথম ম্যাচে আমরা বড় ব্যবধানে জিতেছি, ওই ম্যাচে আমরাও ভালো খেলেছি, ওরাও খেলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আজ ওরা খুব রক্ষণাত্মক খেলেছে। ওরা ওদের স্বাভাবিক খেলা খেলেনি। সময় নষ্ট করেছে। প্রথম ম্যাচের মতো আজও আমরা অনেকগুলো সুযোগ তৈরি করেছি, কিন্তু আজ তা কাজে লাগেনি।” “ফুটবলে এমন হয়। অনেক সময় ভালো দল সাধারণ দলের সঙ্গে হেরে যায়। আমরা প্রথম ম্যাচে জিতলেও এখানে ড্র করেছি। এটা স্বাভাবিকই। তবে পরবর্তীতে আরও ভালো দলের সঙ্গে খেলার জন্য এখান থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারব এবং এখন থেকে শিখে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারব।” ব্যক্তিগত অর্জন নিয়ে অবশ্য কম রোমাঞ্চিত নন মারিয়া। সেরার পুরস্কার নিজের হাতে উঠবে, এমনটা ভাবেননি তিনিও। “আমার খুব লাগছে যে আমাকে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি ভাবিনি আমাকে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়া হবে। আমরা তো সবাই ভালো খেলেছি। সবাই শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের টিম ওয়ার্ক খুব ভালো ছিল এবং এজন্যই আমরা ভালো ফল করেছি।” প্রথম ম্যাচে এক গোল করা দলের অন্যতম সেরা তারকা কৃষ্ণার দাবি ভাগ্য সহায় না হওয়ায় গোল পাননি তারা। মালয়েশিয়া আগের ম্যাচের চেয়ে ভালো ফুটবল খেলেছে এমনটা মানতে চান না এই ফরোয়ার্ড। “অনেক দিন পর আমরা ম্যাচ খেললাম। এই টুর্নামেন্ট নিয়ে আমরা অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছি। সেটার ফলেই এই সিরিজ আমরা জিতেছি। প্রথম ম্যাচ আমরা ৬-০ গোলে জিতেছিলাম। এই ম্যাচ ড্র হলেও আমরা যে কঠোর পরিশ্রম করেছি, সেটা প্রমাণ হয়েছে। কারণ ওরা ওদের মতো খেলেছে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি অনেক ম্যাচটা বের করার। ভাগ্য সহায় না থাকায় গোল হয়নি।” “ভালো বলবো না। কারণ ওরা যে বল পেয়েছে, সেটাই বাইরে মেরেছে এবং ওপরে খেলেছে। ওরা আমাদের খেলতে দেবে না এ রকম একটা মনোভাব নিয়ে নেমেছিল। ওদের সেই লক্ষ্যটা পূরণ হয়েছে।” টুর্নামেন্টে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে বলতে গিয়ে কৃষ্ণা বললেন, নিজের উন্নতিটা বুঝতে পরেছেন এই দুই ম্যাচে। তবে র্যাঙ্কিংয়ে ঢের এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়ার চেয়ে এগিয়ে নিজেদের এগিয়ে রাখতে চান না তিনি। “ফুটবল তো, বলা যায় না। ওরা র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে। তাই ওদের এগিয়েই রাখবো। কিন্তু আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং ফলও পেয়েছি।” মারিয়ার ভাবনাটা অবশ্য ভিন্ন। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ জিতে তাদের কাতারেই রাখাতে চান তিনি নিজেদের। “মালয়েশিয়া তো অনেক ভালো দল। কিন্তু আমরাও চেষ্টা করছি তাদের মতো ভালো দল হওয়ার জন্য। সেভাবে আমরা খেলা উপহার দিয়েছি। যেহেতু তাদের সঙ্গে খেলে আমরা ভালো রেজাল্ট করেছি, অবশ্যই তাদের মতো আমরাও ভালো খেলোয়াড়।” বাংলাদেশের মেয়েদের পরবর্তী মিশন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। অগাষ্টে নেপালে হওয়ার কথা এই আসর। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের এই সিরিজ থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে সেখানে ভালো করার প্রত্যাশা মারিয়ার। “এই খেলা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। এখন সাফ নিয়ে প্রস্তুতি নেব। এখানে যে ভুলগুলো হয়েছে সেগুলো সংশোধন করে নিজেরে তৈরি করব।” কৃষ্ণা বেশ আত্মবিশ্বাসী এবার সাফেও নিজেদের প্রমাণ দিতে পারবেন তারা। “এই টুর্নামেন্ট শেষ হলো। সামনে এখন আরও কিছু সময় পাব। এই সময়টাতে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সুযোগ আছে নিজেদের আরও উন্নতি করার। আমি মনে করি এবার সাফেও আমরা বেশ ভালো করবো এবং বাংলাদেশ ভালো কিছু দেবে।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা