November 24, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, June 29th, 2022, 9:52 pm

আসন্ন কোরবানীর পশুরহাটে ছোট ও মাঝারি গরুর তীব্র সঙ্কটের আশঙ্কা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে কোরবানীর হাটে ক্রেতাদের বেশি পছন্দ ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর তীব্র সঙ্কট রয়েছে। কারণ খামার মালিকরা দ্রুত বর্ধনশীল বিদেশী জাতের বড় আকারের হাইব্রিড গরুর লালন-পালনই বেশি করছে। এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন কোরবানীতে ছোট ও মাঝারি সাইকের গরুর সঙ্কটের আশঙ্কা তীব্র। যদিও কয়েক বছর আগেও কোরবানির আগে ভারত, মিয়ানমার এবং ভুটান থেকে আমদানি করে গরুর বাড়তি চাহিদা মেটানো হতো। কিন্তু ভারত রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করায় এখন দেশীয় গরু ভরসা হয়ে উঠছে। দেশে এই সময়ে বিপুল সংখ্যক খামার গড়ে ওঠেছে। ব্যাপক সীমাবদ্ধতা থাকার পরও দেশে গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। যদিও খামারীদের চাহিদাপূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর কোরবানিতে যখন বাড়তি চাহিদা তৈরি হয় তখনই দেশে গরুর সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। আপদকালীন সঙ্কট মোকাবেলা কিংবা কোরবানির সময় বাড়তি চাহিদা পূরণে গরু-ছাগল বিকল্প উৎস থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অন্যথায় এবারও কোরবানিতে গরু নিয়ে কাড়াকাড়ির মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। খামারী এবং পশুসম্পদ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এগিয়ে আসছে কোরবানীর ঈদ। হাতে গোনা কয়েকদিন বাকি। ঈদ সামনে রেখে ইতোমধ্যে গরু-ছাগলের মতো গবাদিপশুর দর-দামের হাঁকডাক শুরু হয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে নগরবাসীর গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। গতবছর অনেকেই গরু না পেয়ে শেষ দিনে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। আর সারাবছর গোখাদ্যের দামের উর্ধমুখী প্রবণতাসহ নানা সঙ্কটের কারণে দেশে এবার গরু উৎপাদন হ্রাস পাওয়ারও শঙ্কা রয়েছে। দেশে গরুর মাংস রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তারা প্রতিকেজি ৭০০-৭২০ টাকায় কিনছে। যদিও মৎস্য প্রাণিসম্পদমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন, দেশে গবাদিপশুর কোন সঙ্কট নেই। দেশীয় গরু-ছাগলেই শতভাগ কোরবানি হবে।
সূত্র জানায়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে অফিসিয়ালি গরু আমদানির সুযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে চাহিদা পূরণে দুদেশের ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিচ্ছিন্নভাবে সীমিত সংখক গরু দেশে আনা হয়। এবারও কোরবানি সামনে রেখে বর্ডারের কঠোরতা কিছুটা শিথিল করা হতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত দুদেশের ব্যবসায়ী পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। করোনার প্রকোপ কমে আসা এবং আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশে এবার কোরবানি বাড়বে। কিন্তু সেই তুলনায় গবাদি পশুর উৎপাদন নেই। সরবরাহ কম বলেই গরুর মাংসের দাম বাড়ছে। কোরবানি সামনে রেখে বিকল্প উৎস থেকে গবাদিপশু বিশেষ করে গরু-ছাগল খুঁজে সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তা নাহলে কোরবানিতে গরু সঙ্কটের মুখে আবারো পড়বে দেশ। যদিও গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর দেশী গবাদিপশুই শতভাগ ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে। কিন্তু গোখাদ্যের অতিরিক্ত দাম ও দেশীয় উৎপাদন কম হওয়াসহ নানামুখী কারণে এবার কোরবানির ঈদে গরুসহ গবাদিপশু সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আকারে ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর সঙ্কট তীব্র হতে পারে। যে কারণে কোরবানির হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু সরবরাহ ও সেগুলোর ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে আগেভাগে কৌশল নির্ধারণে বিশেষজ্ঞরা সর্বোচ্চ জোর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তা নাহলে কোরবানির হাটে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বর্তমানে উৎপাদনকারী ও খামার মালিকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যাজনিত কারণে কোরবানি পশু নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত বিপদের মুখে রয়েছে। বন্যা নতুন উদ্বেগ তৈরি করছে। বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বন্যা সংঘটিত হওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যা থেকে রক্ষা পায়নি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু। অবশ্য মানুষের সঙ্গে গবাদিপশু উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।
সূত্র আরো জানায়, মহামারী করোনার প্রকোপ কম থাকায় আশা করা হচ্ছে এবার দেশে কোরবানি বেশি হবে। কিন্তু পশুর জোগান কতটা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছেই। খোদ খামার মালিকরা তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেছেন, এবার ছোট ও মাঝারি ধরনের গরুর সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ওই তুলনায় হাটে বড় আকারের গরুর পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ থাকবে। তাছাড়া গোখাদ্যের অত্যধিক দাম বাড়া, লোকসানের মুখে অনেক খামারে উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের সঙ্কটের কারণে কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর সংখ্যা তেমন বাড়ানো যায়নি। ফলে গতবারের তুলনায় বেশি কোরবানি হলে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা খামার মালিকদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। পাণিসম্পদ অধিদফতরের এক তথ্যমতে, গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে দেশে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। তার মধ্যে ৪৬ লাখ ১১ হাজার ৩৮৩টি গরু ও মহিষ এবং ৭৫ লাখ ১১ হাজার ৫৯৭টি ছাগল ও ভেড়া বাজারে বিক্রির জন্য এবার হাটে উঠতে পারে। গত বছর কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। তাছাড়া কোরবানির সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কিছু উট ও দুম্বা আমদানি করে দেশে বাজারজাতকরণ করা হয়।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান জানান, ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও দেশে ছোট গরুর সঙ্কট রয়েছে। ওই কারণে কোরবানির সময় গরু নিয়ে শেষ মুহূর্তে টানাটানি হয়। তবে অনেক খামারি বড় গরু বিক্রি করতে পারেনি। গতবছরে হাটে ওঠানো অবিক্রিত গরু এ বছরও খামারে লালন-পালন করা হচ্ছে। তাতে করে খামারিরা লোকসান গুনছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভারত থেকে অফিসিয়ালি গরু আনার কোন সুযোগ নেই। তারপরও দুদেশের ব্যবসায়ী-টু ব্যবসায়ী পর্যায়ে যদি কিছু গরু আসে তাতে ক্ষতির তো কোন কারণ নেই। কোরবানিতে বাংলাদেশের অতিরিক্ত গরু লাগবে।