মোঃ আবু রায়হান, শেরপুর :
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় উপর্যপুরি দুই দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আর নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে বহু ঘর-বাড়ি। বন্যায় ঘর-বাড়ি, ফসল, রাস্তা-ঘাট, পুল-কালভার্ট ও মৎস্য খামারসহ বিভিন্ন পোল্ট্রি-লেয়ার উৎপাদনকারী ফার্মের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি তথ্য মতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনটি নদী মহারশী, কালঘোশা ও সোমেশ্বরী। প্রতি বছর এই তিনটি নদীর বাঁধ ভেঙে ও উপচে ফসলি জমি, ঘর-বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মহারশী নদীর পার্শ্বের ঐহিত্যবাহী ঝিনাইগাতী সদর বাজারে প্রতি বছর বন্যার পানি ঢুকে লাখ লাখ টাকার মালামালের ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন, কৃষি উপ-সহকারি খন্দকার মঞ্জুরুল হক ও আলামিন জানায় বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কয়েক কোটি টাকা হবে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সরকারিভাবে ভাবে নিরূপণ করার কাজ হচ্ছে। বেসরকারি হিসেবে যে পরিমাণে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে তা কয়েক কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী শুভ বসাক ও হিসাব সহকারী শাহজাহান জানান, দুই দফা বন্যায় রাস্তা-ঘাট, পুল-কালভার্ট এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান জানান, বিগত কয়েক বছরে এমন ব্যাপক আকারে বন্যা হয়নি। এ বছর দুই দফা বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়েছে। সরকারিভাবে আমরা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে। অবিলম্বে ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তা-ঘাট ও পুল-কালভার্টগুলি জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, শেরপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষি ফসল উৎপাদন করে তাদের জীবন-যীবিকা নির্বাহ করে। সম্প্রতি প্রাকৃতিক দূর্যোগে অত্র উপজেলার অধিকাংশ কৃষকের বোরো ধান ঘরে তুলতে পারেনি। সেই ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বহু ঘর-বাড়ি ও কৃষি ফসল। ঘর-বাড়ি হারিয়ে বহু পরিবার স্থানীয় বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, খোলা মাঠ ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার পানিতে ভেসে আসা বা মহারাশি নদীর পূর্বপাড় ভেঙে অসহায় দরিদ্র বিধবা জরিনা বেগমের বাড়িটি সম্পূর্ণরূপে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। শেষ চিহ্ন হিসেবে শুধু রয়েছে নারিকেলসহ দুই তিনটি গাছ। বর্তমানে এই অসহায় বিধবা জরিনা বেগম এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তার শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিয়েছে এই সর্বনাশা মহারশী নদী। এখন সে অসহায় সাহায্য সম্বলহীন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই তার। একই সাথে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়। বর্তমানে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্র/ছাত্রীদের লেখাপড়ার ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। সরকারিভাবে যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবার সরকারি ত্রাণ সহায়তা পায়নি। তাই অত্র অঞ্চলের সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ্যদের সরকারের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া অত্যন্ত জরুরী দরকার বলে মনে করে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আল মাসুদ বলেন, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার ১ হাজার ৩০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো হবে। এখন পর্যন্ত ২৫ ব্যক্তি বসতঘর নষ্ট হওয়ার বিষয়ে আবেদন করেছেন। পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে তাদের ঢেউটিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি