জেলা প্রতিনিধি, সিলেট (বিয়ানীবাজার) :
সিলেটের বিয়ানীবাজারে বানের পানি কখনো কমছে আবার কখনো বাড়ছে। এখানকার বন্যাদুর্গতদের মধ্যে নেই আসন্ন ঈদুল আজহা বা কোরবানি ঈদের ছিটেফোঁটা আনন্দ। ভয়াবহ বন্যায় তাদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিতে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। সাজানো ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, গোলা ভরা ধান- সব হারিয়ে তারা এখন রীতিমতো নিঃস্ব। দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ কোরবানির ঈদ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বিয়ানীবাজারের বন্যদুর্গতরা ব্যস্ত বানের পানি বৃদ্ধি আর কমার মাপঝোঁকে।
গত কয়েকদিন থেকে বন্যার পানি কমলে তা খুব ধীরগতিতে। ফলে উপজেলার প্রায় ১৮ হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি এখনো পানিতে তলিয়ে। যারা ঈদের কোন প্রস্তুতিই নিতে পারছেনা। উপরন্তু ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় আছেন বানভাসি বিশাল এই জনগোষ্টি।
বন্যাদুর্গতরা বলছেন- বন্যার কারণে তাদের এলাকার শত শত মানুষের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এলাকায় ঈদের আনন্দ নেই। আছে ঘুরে দাঁড়ানোর দু:শ্চিন্তা।
বিয়ানীবাজারের বন্যাকবলিত মানুষের কাছে ঈদের আনন্দ এখন আকাশের তারার মতো। এদিকে গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে অবনতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চরম সঙ্কটে জর্জরিত মানুষ দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। স্থানীয় বেশিরভাগ বাজার পানির নিচে।
এতে চরম ভোগান্তিতে দিন পার করছেন বন্যায় আক্রান্ত এলাকার সাধারণ মানুষ। এমনকি হিমশিম খাচ্ছেন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গবাদিপশু বেচাকেনায়ও। বন্যার কারণে গবাদিপশু খাদ্য না থাকায় কোরবানির বাজারে প্রচুর পরিমাণে উঠেছে গবাদিপশু। যার ফলে গবাদিপশুর দাম একেবারে কম। এ কারণে কম দামে বেচতে হচ্ছে গবাদিপশু। এতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। বন্যার কারণে সব হারিয়ে বাধ্য হয়ে গ্রামীণ এলাকার বহু মানুষ কোরবানি দিচ্ছে না বলে জানা গেছে।
আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা রহিজা বানু বলেন, বন্যায় আমার ঘরের বউত জিনিস ভাসাইয়া লইয়া গেছে। সামনে ঈদ কিলাকিতা করতাম ভাবিয়া পাইয়ারনা।
সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য জাকির হোসেন বলেন, দফায় দফায় বন্যা হওয়ার কারণে মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে নেই ঈদের আনন্দ। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান শ্রেণির এগিয়ে আসতে হবে।
কুড়ারবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তুতিউর রহমান বলেন, বন্যার কারণে আমাদের এলাকার শত শত মানুষের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আমাদের এলাকায় ঈদের আনন্দ তো দূরের কথা। মানুষের পেটে এখন ক্ষুধার তাড়না। বন্যাকবলিত মানুষের কাছে ঈদের আনন্দ এখন আকাশের তারার মতো।
চারখাই ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন মুরাদ চৌধুরী বলেন, এই মুহূর্তে ঈদের আনন্দের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষের পুনর্বাসন। পুনর্বাসন খাতে সরকারের আরও বরাদ্দ বাড়ানো উচিত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য বিনা সুদে ঘর নির্মাণের ঋণ চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক নূর বলেন, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য আমাদের একজন আরেক জনের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি