জেলা প্রতিনিধি, রংপুর (গঙ্গাচড়া) :
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষরা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো বেকি ও ছোড়ার চোটে গুরুতর আহত ৭ জনেরই অঙ্গহানী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাত, পা, কান,রগ, আঙ্গুলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেকি ও ছোড়া দিয়ে কাটা গুরুতর আহত ৭ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের কিসমত কুতুব এলাকার মৃত আশরাফ আলীর পুত্র মোস্তাফিজার রহমান (৪৩) মৃত জয়নাল আবেদীনের পুত্র এবিএম জায়দুর রহমান সুরুজ (৪২) ও সুজন মিয়া (৩৬) আজিজার রহমানের পুত্র ফারাজ মিয়া (৪২) মৃত মজিবর রহমানের পুত্র আনারুল ইসলাম (৫৪) ও ময়নুল ইসলাম (৪৩) গত ৬ জুলাই বুধবার রংপুর আদালতে মামলার হাজিরা শেষে ইজিবাইকযোগে বাড়ি ফেরার পথে বিদিতর দক্ষিণ পাড়ায় নেমে বাকি পথ পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সন্ধ্যা অনুমান ৭ টার সময় ফাঁকা রাস্তায় তারা পৌঁছিলে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক বিদিতর দক্ষিণ পাড়ার আলতাব হোসেনের পুত্র আইয়ুব আলী (৪০), আইয়ুব আলীর পুত্র রাকিব মিয়া (২২), মৃত নছিম উদ্দিনের পুত্র আলতাব হোসেন (৬০), আব্দুল জলিলের পুত্র আলতানুর সাগর (৩০), নুর আলম লাদেন (২০), গাজিয়ার রহমানের পুত্র শাহিনুর রহমান ছোটন (২৫), লিটন মিয়া (২৩), মৃত জসিম উদ্দিনের পুত্র আব্দুল জলিল (৫২), গাজিয়ার রহমান (৪৮), শহিদুল ইসলাম (৩৬) এবং কিসমত কুতুব এলাকার বিষাদু মামুদের পুত্র মশিয়ার রহমান (৩৬), মৃত আছাব উদ্দিনের পুত্র আশরাফ আলী (৬০), আশরাফ আলীর পুত্র লাল মিয়া (৩৫), মৃত মতিয়ার রহমানের পুত্র গোলাম মোস্তফা (৪২) জোট হয়ে ধারালো বেকি, ছোড়া, লোহার রডসহ মারাত্মক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া তাদের পথ রোধরোধপূর্বক ঘিরিয়া ধরিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে বেকি, ছোড়া দিয়ে চোট ও কেউ কেউ রড দিয়ে মারতে থাকে। এলোপাতাড়ি রডের মার ও বেকি, ছোড়ার চোট থেকে নিজেদের বাঁচাতে হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিপক্ষের পরিকল্পিত হামলার শিকার নিরস্ত্রধারীরা অসহায় হয়ে যায়। একের পর এক এলোপাতারি চোটে গুরুতর জখমী আহত হয় মোস্তাফিজার রহমান (৪৩), এবিএম জায়দুর রহমান সুরুজ (৪২), সুজন মিয়া (৩৬), ফারাজ মিয়া (৪২), আনারুল ইসলাম (৫৪), ময়নুল ইসলাম (৪৩) ও মহাসিন আলী। আহতদের হাত, পা, কান, রগ, আঙ্গুল কেটে যায় এবং হাড় বের হয়ে যায়। আহতদের আপনজন মশিয়ার রহমান সহ অনেকে তাদের উদ্ধারে এগিয়ে গেলে তাদেরকেও মারপিট করে। নিরুপায় হয়ে মশিয়ার রহমান ৯৯৯ কল করলে গঙ্গাচড়া মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছিলে আস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২ ধারালো রক্তমাখা বেকি ও রড উদ্ধার করে। আহতদের এ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ভর্তি করা হয়। আহতদের প্রত্যেককে ৩ থেকে ৪ ব্যাগ করে রক্ত দেওয়া হয়েছে এবং কাটা যাওয়া স্থানে ৫০ টার বেশী করে সেলাই ও পিন দিয়ে আটকানো হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসক কাউকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা আশঙ্কা করছে আহতদের অঙ্গহানী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ঘটনায় মশিয়ার রহমান বাদী হয়ে ১৪ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই একিউএম কিবরিয়া সরওয়ার্দী জানান, ঘটনাস্থল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল), অফিসার ইনচার্জ ও ওসি তদন্ত মহোদয় একাধিক বার পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। ঘটনার সাথে জড়িত আসামী আব্দুল জলিল, লাল মিয়া ও গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। বাকী আসামীরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে আদালত জামিনে বেড়িয়ে এসে আব্দুল জলিল ও গোলাম মোস্তফা বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে আহতদের স্বজনরা জানান। এছাড়া আহত ও তাদের স্বজনদের ঘায়েল করার জন্য আসামীরা কৌশলে একটি মিথ্যা মামলা থানায় দাখিল করায় এলাকায় মানুষের মাঝে যেমন সমালোচনা হচ্ছে তেমনি আহত ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তারা জানান, পুলিশ সঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে আসার কারনে আমরা প্রাণে বেঁচে গেলেও হয়তো অঙ্গহানী অবস্থায় চলাফেরা করতে হবে। আমরা দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পুলিশের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি করছি আমরা জেন ন্যায় বিচার পাই কোন মিথ্যা ষড়যন্ত্রের শিকার না হই।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি