নিজস্ব প্রতিবেদক:
কঠোর তদারকির আওতায় বড় অঙ্কের এলসি। বাংলাদেশ ৫০ লাখ ডলার ও তার বেশি অঙ্কের যে কোনো এলসি ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে অনলাইনে তদারকি করছে। মূলত আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে বহুমুখী পদক্ষেপের পাশাপাশি বড় অঙ্কের এলসিতে কঠোর তদারকি শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্যের বড় অঙ্কের কোনো এলসি খোলা হলেই তার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার প্রভিশন ছাড়া বড় অঙ্কের কোনো এলসি খোলার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আমদানি ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলেও ওই অনুপাতে রপ্তানি আয় বাড়ছে না। পাশাপাশি রেমিট্যান্স কমার কারণে ব্যাংকগুলোতে ডলার প্রবাহ কমে গেছে। ফলে আমদানি ব্যয় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলারের জোগান দিতে হচ্ছে। তাতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। সব মিলে প্রবল চাপে পড়েছে রিজার্ভ। মূলত রিজার্ভের সাশ্রয় করতে ও নিরাপদ রাখতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৫০ লাখ ডলারের বেশি অঙ্কের এলসিই বেশি খোলা হচ্ছে। আর তারচেয়ে কম অঙ্কের ছোট ছোট এলসি কম খোলা হচ্ছে। কারণ এলসি কমিশন ও অন্যান্য চার্জ মিলে বড় অঙ্কের এলসি খুললে খরচ কম পড়ে। আর ছোট অঙ্কের এলসি খুললেও খরচ বড় অঙ্কের এলসির সমানই। ওই কারণেই গ্রাহকরা বড় অঙ্কের এলসিই বেশি খুলছে। তবে এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে। একই সঙ্গে এলসি খোলার ক্ষেত্রেও তদারকি আরোপ করে। তাতেও আমদানি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এখন ওই খাতে তদারকি আরো বাড়ানো হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনলাইনে একটি ড্যাশ বোর্ডের (বিশেষ সফটওয়্যার) বড় অঙ্কের ঋণগুলো আগে থেকেই তদারকি করে আসছে। কিন্তু আগে ডলারের প্রবাহ স্বাভাবিক থাকায় এলসিতে এত কড়াকড়ি করা হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকটের কারণে সেক্ষেত্রে বেশি তদারকি আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি এখন বড় অঙ্কের ঋণের মতো করে বড় অঙ্কের এলসিতেও ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বড় অঙ্কের কোনো এলসি খুললে সঙ্গে সঙ্গে ওই তথ্য ড্যাশ বোর্ডে দিতে হচ্ছে। তার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা পেয়ে সব ব্যাংকের বড় অঙ্কের এলসি খোলার গতিবিধি মনিটর করতে পারে। ফলে কোন ব্যাংকে কেমন ডলারের চাহিদা থাকতে পারে তা আগে থেকেই অবগত থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ওসব ব্যবস্থার পাশাপাশি এখন থেকে যে কোনো অঙ্কের এলসি খোলার কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ সব ধরনের এলসির তথ্য আগেই কেন্দ্রী ব্যাংককে জানাতে হবে। এভাবেই বাজারে ডলারের চাহিদা সম্পর্কে আগাম তথ্য নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার বাইরে আবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া অন্য কোনো বিলাসী বা অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি খুলতে ডলারের জোগান না দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মৌখিকভাবে বলে দেয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো ওসব খাতে এখন কোনো ডলারের জোগান দিচ্ছে না। তাতে ওসব খাতের এলসি খোলা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু তাতেও আমদানি ব্যয় ও এলসি খোলা কমছে না। বরং বেড়েই চলেছে। গত জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে এলসি খোলা বেড়েছে ৪৩ শতাংশ ও আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। যদিও তার আগে জুলাই-এপ্রিলে এলসি খোলা ও আমদানির ব্যয় বৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছিল। জুলাই-এপ্রিলে এলসি খোলা বেড়েছিল ৪০ শতাংশ এবং আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ৪৪ শতাংশ। মে মাসে এলসি খোলা ও আমদানি ব্যয় দুটোই বেড়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার চাপ বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় এখন আমদানি ব্যয় বেশি মাত্রায় বেড়েছে। ওই কারণে তদারকিও বাড়ানো হয়েছে। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সহনীয় হয়ে আসবে। কারণ বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন বিশেষ করে শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে অফশোর ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে পারছে। আগে তা পারতো না। ওই ঋণ নিলে বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। তাছাড়া রপ্তানিকারকরা আগে বেশি দাম পাওয়ার জন্য ডলার ধরে রাখতো। এখন তা কমানো হয়েছে। তাতেও ডলারের সরবরাহ বাড়বে। তাছাড়া দেশের ব্যাংকগুলো বিদেশি ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় খোলা হিসাবে (নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট) ডলার রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই হিসাবেও তদারকি করছে। বিদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর কাজে নিয়োজিত এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ডলার ধরে রাখতো। তা যাতে না করতে পারে সেজন্য প্রবাসীরা যেদিন ডলার এক্সচেঞ্জ হাউজে জমা করবে তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা ব্যাংকে জমা দিতে হবে বলে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তাতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি