নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) হঠাৎ করে ভোজ্যলবণের জন্য অপরিহার্য আয়োডিনের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে। ফলে ভোজ্যলবণে ব্যবহার কমে যাওয়ার পাশাপাশি লবণের বাজারে অস্থিতিশীলতা হওয়ার শঙ্কা তীব্র হচ্ছে। এমনিতেই গত কয়েক মাসে দেশে লবণের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আর দেশে লবণের রেকর্ড উৎপাদন সত্তে¡ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর ৫ লাখ টন লবণের ঘাটতি থাকবে। দেশে উৎপাদিত ও ব্যবহার্য লবণের ৯-১০ লাখ টন ভোজ্য। আর প্রতি বছর দেশে ৭০-৭৫ টন আয়োডিনের চাহিদা রয়েছে। লবণ শিল্প উদ্যোক্তা এবং বিসিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের লবণনীতি অনুযায়ী ভোজ্যলবণে আয়োডিন মেশানোর বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু লবণ শিল্পমালিকরা আয়োডিন আমদানি করতে পারে না। বিসিকের কাছ থেকে ভোজ্যলবণের উৎপাদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আয়োডিন কিনে নিতে হয়। আগে কেজিপ্রতি আয়োডিন ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করলেও সম্প্রতি আয়োডিনের দাম বাড়িয়ে সাড়ে ৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। হঠাৎ করেই আয়োডিনের দাম ১১৭ শতাংশ দাম বাড়ানোয় লবণ শিল্পমালিকরা বিপাকে পড়েছে। আর দ্বিগুণেরও বেশি দাম বাড়ানোয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি লবণ মিল মালিকদের পক্ষ থেকে আয়োডিন উত্তোলনের হারও কমে গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে তিন শতাধিক লবণ মিল থাকলেও অধিকাংশের অবস্থাই খারাপ। লবণ মিলগুলো মহামারীর প্রভাব ছাড়াও পুঁজি সংকটে রয়েছে। দেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতির কারণে বিশ্ববাজার থেকে ৫ লাখ টন লবণ আমদানি করতে হবে। সর্বশেষ মৌসুমে রেকর্ড ১৮ লাখ ৩২ হাজার টন লবণ উৎপাদন হলেও ক্রমবর্ধমান চাহিদা বৃদ্ধিতে আমদানির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। ইতোমধ্যে বিসিক দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতিও দিয়েছে। সংকটের কারণে গত কয়েক মাসের মধ্যে দেশে লবণের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এমন অবস্থায় আয়োডিনের দাম বাড়ানোয় তার ব্যবহার কমে যাওয়ার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি মিলমালিকরা বড় ধরনের সংকটে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ) ও লবণ সেল প্রধান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পটাশিয়াম আয়োডেটের দাম কেজিপ্রতি ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। বিশ্ববাজারে আয়োডিনের দাম বৃদ্ধিতে আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন-২০২১ ও জাতীয় লবণনীতি-২০২২ অনুুযায়ী বিসিক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আয়োডিনের দাম বাড়ানোর ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিসিকের কাছ থেকে আয়োডিন সংগ্রহের পরিমাণও কমে গেছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির জানান, লবণ মিলমালিক সমিতি কিংবা লবণ শিল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই আয়োডিনের দাম বাড়িয়েছে বিসিক। আয়োডিনের দাম বৃদ্ধির ফলে দেশের ৩ শতাধিক লবণ মিলমালিককে দ্বিগুণেরও বেশি দামে আয়োডিন কিনে লবণের সঙ্গে সংমিশ্রণ করতে হচ্ছে। ফলে লবণের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি দেশের ছোট-মাঝারি লবণ মিলমালিকরা সংকটের মধ্যে পড়ার কারণে আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন-২০২১ বাস্তবায়নে সরকারের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করার শঙ্কা বাড়ছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি