সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়ার গবেষণায় দেশে প্রথমবারের মতো সামুদ্রিক শৈবালের স্থলজ পরিবেশে চাষ প্রযুক্তির উন্নয়নের বিষয়টি উঠে এসেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র, কক্সবাজার পরিচালিত ‘সী উইড কালচার এন্ড সী উইড প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ কোস্ট’ রিসার্চ প্রজেক্টের অংশ হিসেবে প্রথম বারের মতো ‘সী উইড সীডলিং প্রোডাকশন থ্রো বায়োটেকনোলজি: হ্যাচারি টু ফিল্ড এসেসমেন্ট’ শিরোনামে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়া ও অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম একটি গবেষণা সম্পন্ন করেন।
জানা যায়, এই গবেষণায় ১১টি প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল যথা উলভা লেক্টোকা, উলভা ইন্টেস্টাইনালিস, হাইড্রোক্লেথ্রাস ক্লেথ্রাটাস, সারগেসাম অর্নোডিয়েনাম, কলারপা রেসিমোসা, এন্টেরোমর্ফা ক্লেথ্রাটা, হিপ্নিয়া ভেলেন্টেই, গ্রেসিলারিয়া ভেরোকোসা, গ্রেসিলারিয়া কর্টিকাটা, পাদিনা বরিয়ানা ও কল্পোমেনিয়া সাইনোসা এর ইনভিট্রো প্রক্রিয়ায় চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে চাষ পদ্ধতির উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। প্রকল্পের পর্যবেক্ষকগণের নেতৃত্বে ২টি ভিন্ন পরিবেশে ২টি ল্যাবের মাধ্যমে গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
এতে সামুদ্রিক পানি ব্যবহার করে কক্সবাজারে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র এবং কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত সামুদ্রিক পানি ব্যবহার করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে এই গবেষণার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
গবেষণা পর্যবেক্ষণের প্রধান পর্যবেক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়া বলেন, উভয় পরিবেশেই ইনভিট্রো পদ্ধতিতে সামুদ্রিক শৈবালের উৎপাদন সম্ভব। তবে স্বাভাবিকভাবেই সামুদ্রিক পানি সামুদ্রিক শৈবালের স্থলজ চাষে অধিক উপযোগী।
তিনি মত প্রকাশ করেন যে, ১১টি প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবালের মধ্যে বেশির ভাগই যেমন উলভা লেক্টোকা, উলভা ইন্টেস্টাইনালিস, কলারপা রেসিমোসা, এন্টেরোমর্ফা ক্লেথ্রাটা, হিপ্নিয়া ভেলেন্টেই, গ্রেসিলারিয়া ভেরোকোসা, গ্রেসিলারিয়া কর্টিকাটা এর ইনভিট্রো পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে সারাবছরই সামুদ্রিক শৈবাল চাষ করা যেতে পারে।
ইতোমধ্যে ৩টি প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল যথা উলভা লেক্টোকা, উলভা ইন্টেস্টাইনালিস ও গ্রেসিলারিয়া কর্টিকাটা এর ইনভিট্রো পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে সফল চাষ প্রযুক্তির উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান এবং উক্ত প্রযুক্তি কৃষকদের মধ্যে হস্থান্তর করা সম্ভব।
অধ্যাপক ফারুক মিয়া জানান, কৃত্রিম পরিবেশে টিস্যু রিজেনারেশনের পাশাপাশি স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমেও উলভা লেক্টোকা এবং উলভা ইন্টেস্টাইনালিসন এর স্থলজ পরিবেশে চাষ সফল হয়েছে। আরও একটি প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ‘কলারপা রেসিমোসা’ এর ইনভিট্রো পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে চাষ প্রযুক্তি সফলতার পথে, গবেষণা চলছে এবং আশাবাদী খুব শিগগিরই এই প্রজাতির ইনভিট্রো পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে চাষ প্রযুক্তির সাফল্য আসবে। অন্যান্য প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবালও স্থলজ পরিবেশে উৎপাদন সম্ভব হবে, তবে এর জন্য আরো গবষণা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বঙ্গোপসাগরের অসংখ্য জৈব সম্পদের মধ্যে সামুদ্রিক শৈবাল (সী উইড) অন্যতম এবং জৈব প্রযুক্তিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাগরে সাধারণত সবুজ, বাদামী ও লাল রঙের শৈবাল পাওয়া যায়। আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই সামুদ্রিক শৈবালের ভূমিকা অপরিসীম।
শিপ্লজাত পণ্য উৎপাদনে সামুদ্রিক শৈবালের প্রচুর কাঁচামাল প্রয়োজন যা বঙ্গোপসাগরে কেবল ৪-৫ মাস চাষ করে তা পাওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সারা বছর সামুদ্রিক শৈবালের বায়োমাস উৎপাদন। এক্ষেত্রে কেবল কৃত্রিম পরিবেশে সামুদ্রিক শৈবালের চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে চাষের উন্নয়নই পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম