নিজস্ব প্রতিবেদক:
অগ্নি নিরাপত্তার স্বার্থে দীর্ঘদিন আগেই প্লাস্টিক শিল্পনগরী ঢাকা মহানগরীর ঘিঞ্জি এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু অনুমোদনের দীর্ঘ ৭ বছরও প্লাস্টিক শিল্পনগরীর প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণই হয়নি। বিগত ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বিসিক প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের বড়বর্ত্তা মৌজায় ৫০ একর জমিতে প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পটি গড়ে তোলার কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই প্রকল্পের কাজ ঝুলে রয়েছে। প্লাস্টিক শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ভূমি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেও কিছু জটিলতায় জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। জমি বুঝে পেলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। বিগত ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্প একনেকে অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দু’দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেখানে ৩৬০টি প্লটে ২৫০টি এসএমই শিল্প ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। তাতে প্রায় ১৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ১৩৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও কয়েক দফায় তা বেড়ে ৪২৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় বিগত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৭১ জন প্রাণ হারায়। ওই ঘটনার পর সরকার দ্রুত পুরান ঢাকা থেকে প্লাস্টিক কারখানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসককে গত বছরের জুনে ২১৮ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। প্রকল্পের ৫০ একর জমির মধ্যে ৩৩ একর সরকারি খাসজমি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বাকি ১৭ একর। ফলে কয়েক বার জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়ে গেলেও জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। স্থানীয় লোকজন জমি অধিগ্রহণে বাধা দিচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, প্লাস্টিক শিল্পখাতের ব্যবসায়ীরা আলাদা একটি শিল্পনগরী স্থাপনের জন্য ২০০৬ সাল থেকে দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, প্লাস্টিক শিল্পনগরীর প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও সেখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। তবে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও সাবেক ও বর্তমান কিছু সরকারি কর্মকর্তার কৌশলের কারণে প্রকল্পটির কাজ শুরু হচ্ছে না। শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিকের সঙ্গে বারবার সভা করলেও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। ফলে এখনো পুরান ঢাকার লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও ইসলামবাগ এলাকায় প্রায় ৩ হাজার প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। সেখানে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রকল্পটি বাদ হলে কিংবা নতুন করে স্থান নির্বাচন করতে গেলে তা বাস্তবায়নে আরো পিছিয়ে যাবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ জানান, রাজধানীকে যানজট ও দুর্ঘটনামুক্ত শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে সরকার একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু একটি পক্ষের কারণে ওই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্লাস্টিক শিল্প থেকে ১৭ কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি আয় হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৩ শতাংশ। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে এর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ শতাংশ। এ খাতে ৬ থেকে ৭ লাখ লোক জড়িত রয়েছে। কিন্তু প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্প শেষ না হওয়ায় কারখানা মালিকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। এমন অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদে নতুন বিনিয়োগ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না। ফলে উৎপাদনও বাড়ানো যাচ্ছে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক নিজাম উদ্দিন জানান, জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। তবু স্থানীয় কিছু লোক জোর করে জায়গা দখল করে আছে। তবে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২