জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা :
গাইবান্ধা শহরের মধ্যে পরিবেশ দুষনকারি পরিত্যাক্ত ঘাঘট লেক উন্নয়নের কাজ চলছে। প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ হলে জেলা শহরের তিন কিলোমিটার এই লেকটি প্রধান বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে গাইবান্ধা জেলা শহরের ব্রিজ রোডের পুরাতন ঘাঘট নদীর তীরেজেলা প্রশাসকের বাসভবন, স্বাধীনতা প্রাঙ্গন, জেলা আনসার ও ভিডিপি অফিস, জেলা জজের বাসভবন, পোষ্ট অফিস, পুরাতন বাজার ও নতুন বাজার অবস্থিত। এছাড়া নদীর দুইপারে কয়েক হাজার লোক বসবাস করেন। নদী ভাঙন ও বন্যার হাত থেকে জেলা শহরকে রক্ষার জন্য ১৯৯০ সালের দিকে এই ঘাঘট নদীটি লুপ কাটিং করে উত্তরে সরিয়ে দেওয়া হয়। এতে মুল ঘাঘট নদী তিন কিলোমিটার অংশ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। নদীতে কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনা জমে শহরের পরিবেশ দুষিত করছে। এই বাস্তবতায় স্থানীয় জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ জনাব মাহাবুব আরা বেগম গিনির একান্ত প্রচেষ্টায় গাইবান্ধা জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর(এলজিইডি)’র মাধ্যমে ঘাঘট লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এজন্য মোট ২৭ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়। কাজ শেষ হবার কথা ২০২৩ সালের ৩০ জুন। এখন পর্যন্ত ৬৫% কাজ হয়েছে।
ঘাঘট লেক উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, লেকের দুই পারের মানুষের যোগাযোগ উন্নয়নে ৫৪ ও ৪৫ মিটার দুইটি ব্রীজ নির্মাণ, একটি ওয়াশ ব্লক নির্মাণ, উভয় পাড়ে ছয় ফুট করে ফুটপাত নির্মাণ, ২০টি সিট বেঞ্চ ও ৪টি ঘাটলা নির্মাণ, দুইটি স্লুইচ গেট নির্মাণ, সংযোগ সড়ক, একটি আবর্জনা ফেলার ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন, সিসি ব্লক দিয়ে নদীর স্লোপ প্রোটেক্শন ও নদীর তলদেশের মাটি কাটা এবং বৃক্ষ রোপন।
এসব কাজের মধ্যে অধিকাংশ শেষ হয়েছে। তবে ৫৪ ও ৪৫ মিটার দুইটি ব্রীজ নির্মাণও স্লপ প্রটেকশন কাজের ঠিকাদার এন.এন বিল্ডার্স কাজ যথা সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় তার কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। খুব শীঘ্র দরপত্র আহবান করে নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে ব্রীজ দুইটির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত এবং ডাম্পিং স্টেশনের কাজও শুরু করা হবে। তবে নদীর দুই পাড়ে কিছু কিছু অংশে সিসি ব্লক দিয়ে নদীর স্লোপ প্রোটেক্শন ও ফুটপাত নির্মাণে কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। এর কারণ ঘাঘট লেকের দুইপারে সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। ওইসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করার কারণে নদীর দুই পারে কিছু কিছু অংশে ব্লক দিয়ে নদীর স্লোপ প্রোটেক্শন, লেকের ফুটপাত নির্মাণ ও বৃক্ষ রোপন করা যাচ্ছে না।
শহরের ব্রীজ রোড এলাকার বাসিন্দা রেজাউল হক বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে ঘাঘট লেকটি পরিত্যক্ত থাকায় কচুরিপানা জমেছে। ময়লা আর্বজনায় ভড়ে গেছে। এখান থেকে মশা মাছি ছড়াচ্ছে। জেলা শহরের পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। লেকের কাজ সম্পন্ন হলে এ অবস্থা থাকবে না। এর পরিবর্তে এটি বিনোদন স্পটে পরিণত হবে। তিনি আরও বলেন, ঘাঘট লেকের দুইপারে বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সুষ্ঠভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা জরুরী।
পরিবেশ আন্দোলনের নেতা জিয়াউল হক বলেন, গাইবান্ধা জেলা শহর হলেও এখানে বিনোদনের কোনো জায়গা নেই। ঘাঘট লেক বাস্তবায়িত হলে বিনোদনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। মানুষ এখানে এসে সময় কাটাবে। উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমবে। তিনি আরও বলেন, ঘাঘট পারের সরকারি-বেসরকারি অবৈধ স্থাপনা দ্রুত উচ্ছেদ করা না হলে ঘাঘট লেক প্রকল্পের উদ্দ্যেশ্য ভেস্তে যেতে পারে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাবিউল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ঘাঘট লেকের কাজ চলমান রয়েছে। কিছু কিছু স্থানে অবৈধ স্থাপনার কারণে সিসি ব্লক দিয়ে নদীর স্লোপ প্রোটেক্শন ও ফুটপাত নির্মান কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যথাসময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য তিনি স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি