নিজস্ব প্রতিবেদক:
অনুমোদন পেলেও লোকসানের ভয়ে চাল আমদানির ঝুঁকি নিচ্ছে না বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। ফলে দেশের চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখিতার মধ্যেও চাল আমদানিতে মন্থরতা বিরাজ করছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ বাড়াতে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ১০ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ওই হিসাবে প্রতিদিন ৮ হাজার ৪১৭ টন করে ৪২ দিনে (১ জুলাই-১১ আগস্ট) ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা মাত্র ৩৪ হাজার টন চাল আমদানি করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ৪২ দিনের লক্ষ্যমাত্রার ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। চাল ব্যবসায়ীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ডলারের আকাশচুম্বি দাম ও সঙ্কট বিরাজ করছে। আর ভারতের বাজারে চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এমন পরিস্থিতিতে বেশি দামে চাল আমদানি করে সঠিক দামে দেশে বিক্রি করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ইতোমধ্যে চাল আমদানি করে বিপুল অঙ্কের লোকসান গুনেছে। তাছাড়া বর্তমানে বড় আমদানিকারকরা এলসি খুলতে পারলেও ডলার সঙ্কটে ছোট বা মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীরা এলসিই খুলতে পারছে না। মূলত ওসব কারণেই চাল আমদানিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সূত্র জানায়, ডলারের অস্থিতিশীলতা চাল আমদানিকারকদের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ফেলেছে। ৯৪ টাকা ডলার দরে চাল কিনে দেশে আসার পর ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে ডলারের দর ১১৪ টাকা বা আরো বেশি হয়ে যাচ্ছে। ওই বাড়তি টাকা চালের দামের সাথে যোগ হয়ে বেড়ে যাচ্ছে দাম। আর ওই দামে চাল বিক্রি করতে পারা যাবে কি না তা অনিশ্চিত। ফলে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে নির্ধারিত পরিমাণ চাল আমদানি হবে কি না তা অনিশ্চিত। বর্তমানে ভারতে মোটা চালের দাম টনপ্রতি ৩০০ ডলার। আর দেশে মোটা চালের দাম তার চেয়ে কম। ফলে ওই চাল আনার সুযোগ নেই। আর সরু চাল আমদানিতে শুল্কসহ খরচ সাড়ে ৫০০ ডলারেরও বেশি। বর্তমানে ডলার মূল্যের অস্থিতিশীলতার কারণে প্রকৃত আমদানি খরচ নির্ধারণ করাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে ভারতের বিকল্প হিসেবে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডে চালের জোগান থাকলেও সেখান থেকে চাল আমদানিতে খরচ ভারতের চেয়েও বেশি। আর মিয়ানমার থেকেও চাল আমদানির সুযোগ নেই।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে ২০২০-২১ অর্থবছরে চাল আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৮৫ কোটি ৯ লাখ ডলার। আর বিদায়ী অর্থবছরে (২০২১-২২) ৪২ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের চাল আমদানি হয়। ওই হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে চাল আমদানি কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। আর মাস হিসাবে সর্বশেষ গত জুন মাসে চাল আমদানি হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টন। তার মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে ১ হাজার টন। এজন্য ব্যবসায়ীরা বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের উচ্চমূল্য ও সঙ্কট এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে জ¦ালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে সবমিলে দেশের বর্ধিত বাজারের চেয়েও আমদানি চালের মূল্য বেশি পড়ছে।
এদিকে চাল আমদানিকারকদের মতে, ছোটখাটো যারা চাল আমদানির বরাদ্দ পেয়েছিল তাদের কেউই এলসি খোলেনি। যাদের টুকটাক সুযোগ ছিল এলসি খোলার তারাই কিছুটা আনছে। ব্যাংক এলসি দিচ্ছে না। ডলারের ক্রাইসিস। এমন অবস্থায় এলসির জন্য বরাদ্দ পেলেও ছোটখাটো আমদানিকারকদের পক্ষে চাল আমদানি সম্ভব হবে না। আর আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময়মূল্য নির্দিষ্ট করে না দেয়া হলে চাল আমদানি করে ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। ডলারের রেট ফিক্সড করা ছাড়া বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ