November 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, August 28th, 2022, 9:57 pm

স্বল্প বরাদ্দে ব্যাহত হচ্ছে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের সুষম ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

স্বল্প বরাদ্দে সরকারি হাসপাতালের রোগীদের সুষম ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। বিগত এক দশকেও বাড়েনি রোগীর খাবারের বরাদ্দ। অথচ ওই সময়ে দেশে প্রায় ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। ২০১৩ সালে একজন রোগীর খাবারের জন্য যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হতো, ২০২২ সালে এসেও তা বাড়েনি। ফলে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় খুব স্বাভাবিকভাবেই রোগীর খাবারের মান কমেছে। অথচ একজন অসুস্থ মানুষের সুস্থতার জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ সুষম ও পুষ্টিকর খাবার জরুরি। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে সরকারি হাসপাতালগুলো তার সঠিক জোগান দিতে পারছে না। ফলে মিটছে না রোগীর পুষ্টির চাহিদা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের খাবারের ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষই করে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকে। অর্থাৎ রোগীপ্রতি মাথাপিছু একটি নির্দিষ্ট অংকের বরাদ্দ দেয়া হয়। তা দিয়েই রোগীদের তিনবেলা আহার সরবরাহ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিগত ২০১৩ সাল থেকে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের সাধারণ স্কেলের ডায়েটের দৈনিক বরাদ্দ ১২৫ টাকা। তার মধ্যে সকালের নাশতার জন্য বরাদ্দ ৩৩ টাকা, দুপুর ও রাতের খাবারে ৯২ টাকা। তবে পুরো ১২৫ টাকাই রোগীর জন্য ব্যয় হয় না। সেখান থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বাদ দিয়ে রোগীর তিনবেলার খাবার অবশিষ্ট ১০৬ টাকায় দেয়া হয়। অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি রোগীর খাবারের একটি সর্বজনীন মেন্যুও ঠিক করে দেয়া হয়। ২০১৩ সালের নিয়ম অনুযায়ী সাধারণত সকালের নাশতার জন্য গড়ে ১৫০ গ্রাম পাউরুটি, চার ইঞ্চির একটি কলা, ২০ গ্রাম চিনি ও একটি ডিম দেয়ার কথা বলা হয়েছে। দুপুর ও রাতের খাবারে প্রতি বেলায় এক কেজির রুই বা কাতল মাছের ১৪০ গ্রামের টুকরো অথবা ৩৪০ গ্রাম মুরগির মাংস, একই ওজনের ভাত, ৪০ গ্রাম মসুর ডাল, সবজি (পেঁপে ও আলু) ৪০০ গ্রাম, সয়াবিন তেল (উন্নত মানের) ২৫ গ্রাম, পেঁয়াজ ৫০ গ্রাম দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০০৯ সালে সরকারি হাসপাতালে রোগীপ্রতি বরাদ্দ ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করা হয়। ২০১৩ সালে এসে তা বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করা হয়। হাসপাতালগুলো রোগীর জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খাবার সরবরাহ করে। প্রতি বছর দরপত্রের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারকে দিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করে। তাছাড়া শয্যার বাইরেও যেসব রোগী থাকে তাদের জন্যও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সরকারের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ১০ শয্যা, ২০, ৩১, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বিভিন্ন শয্যার হাসপাতালের সংখ্যা ৪৮৫টি। মাধ্যমিক পর্যায়ে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যার ৬২টি জেলা, ৫০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল ও এক হাজার থেকে আড়াই হাজার শয্যার টারশিয়ারি (বিশেষায়িত) পর্যায়ের ৩০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৪টি শয্যা রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৪৯ হাজারের কিছু বেশি। মাধ্যমিক ও টারশিয়ারি পর্যায়ের প্রায় সব হাসপাতালে শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী সাধারণত ভর্তি থাকে।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য রান্না করা খাবারের পরিমাণ সরকারের নির্দেশনা পরিমাণ থাকে না। মুরগির মাংসের পরিমাণ ৩৪০ গ্রাম দেয়ার কথা থাকলেও তা থাকে ৫০-৬০ গ্রামের মতো। পাউরুটি ১৫০ গ্রামের জায়গায় ১০০ গ্রাম, মাছ ১৪০ গ্রামের বদলে ৫০ গ্রাম করে দেয়া হয়। মূলত বরাদ্দ অনুযায়ী পরিমাণ নিশ্চিত করা কঠিন হওয়ায় মানও ঠিক রাখা যাচ্ছে না। অথচ স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়েও হাসপাতালে ৭ রকমের ডায়েট দেয়া হতো। কারণ রোগীদের জন্য বিভিন্ন স্কেলে ডায়েট প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালে রোগীদের জন্য সঠিক ডায়েটের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বরাদ্দ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ডায়েট নিশ্চিত করা জরুরি।
এদিকে রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে সরবরাহকৃত খাবার সুস্বাদু হয় না। হাসপাতাল থেকে যে পরিমাণ বা মানের খাবার দেয়া হয় তার ওপর নির্ভর করা যায় না। ফলে বাধ্য হয়েই রোগীর জন্য স্বজনরা বাড়ি থেকে অথবা কিনে খাবার আনে। অসুস্থতার সময় পুষ্টি ঠিক রেখে খাবারের বৈচিত্র্য ও স্বাদ না থাকায় হাসপাতালের খাবারে রোগীদের আগ্রহ থাকে না। তাছাড়া সকালে, দুপুরে ও রাতে খাবার দেয়া হলেও বিকালে বা অন্য সময়ে কোনো নাশতার ব্যবস্থা নেই। ওই সময়ও রোগীদের বাইরে থেকে কিনে বা বাড়ি থেকে এনে নাশতা খেতে হয়।
অন্যদিকে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের মতে, পুষ্টিকর খাবার দিতে গেলে বিদ্যমান বরাদ্দের টাকায় সম্ভব নয়। দেশে সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য ১ হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ক্যালোরির খাবার প্রয়োজন। তবে রোগী ভেদে তার ভিন্নতা থাকতে পারে। রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী তার ডায়েটও আলাদা হবে। তবে বর্তমানে ১০৬ টাকায় প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা কঠিন। রোগীদের খাবারের বরাদ্দ অবশ্যই বাড়াতে জরুরি।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, রোগীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে খাবারের জন্য দৈনিক বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানেও রোগীদের জন্য ডাল, মাংস, মাছ, ডিম, কলা থেকে শুরু করে খাবারে ভিন্নতার চেষ্টা করা হয়। তবে চলমান বরাদ্দে তা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়কে দৈনিক ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করা যায় তার কাছাকাছিও বরাদ্দ রাখা হলে রোগীদের জন্য আরো ভালো খাবার তৈরি করে সরবরাহ করা যাবে।