জেলা প্রতিনিধি, ফেনী :
ফেনীতে জিম ব্যবসার আড়ালে টর্চার সেল গড়ে তুলেছে যুবলীগ নেতা ইমতিয়াজ। ওই নারী দিয়ে ব্ল্যাকমেলিংয়ের মাধ্যমে ওই টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয় টার্গেটকৃত ব্যাক্তিদের। শুক্রবার রাতে ওই জিমনেসিয়ানে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় যুবলীগ নেতা ইমতিয়াজসহ ৫ জনকে। শনিবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
জানা যায়, একটি বেসরকারী কোম্পানীর কুমিল্লা শাখায় কর্মরত ভুক্তভোগী গত বুধবার দুপুরে ফেনীর ট্রাংক রোডে অফিসের কাজ শেষে মদিনা বাসস্ট্যান্ড থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের উদ্দেশ্যে দুপর ১২ টা ৪৫ মিনিটে রওয়ানা দেন। বাস ছেড়ে যাওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর বিসিক রাস্তার মোড়ে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন উক্ত বাস থামিয়ে ভুক্তভোগীকে গাড়ী থেকে নামতে বলেন।ওই ভুক্তভোগী গাড়ী থেকে নামার পর তারা তাকে একটি চায়ের দোকানের ভিতরে নিয়ে যায় এবং তার সাথে থাকা ২ হাজার ২ শ টাকা ও মোবাইল ফোন জোরপূর্বক কেড়ে নেয়। পরবর্তীতে তারা সিএনজির মাধ্যমে ফেনী শহরের একটি জিম সেন্টারের নিচ তলার রুমে নিয়ে ওই ভুক্তভোগীকে আটকে রাখে এবং অপহরণকারীরা তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও চর-থাপ্পর দেয় এবং তার কাছে ১ লাখ টাকা দাবী করে। উক্ত টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। পরে ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল হতে অপহরণকারীরা তার স্ত্রীর কাছে ফোন করে ১ লাখ টাকা দাবী করে এবং উক্ত টাকা না দিলে তার স্বামীকে মেরে ফেলা হবে বলে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। তখন তার স্ত্রী কোন উপায় না পেয়ে ভয়ে তাৎক্ষনিভাবে বিকাশের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা প্রেরণ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ কর্মকর্তার সাথে এক নারীর আপত্তিকর ভিডিওচিত্র মোবাইলে ফোনের মাধ্যমে ধারন করে এবং এসএস পাইপ দিয়ে তাকে পিটিয়ে আঘাত করে।একপর্যায়ে তার স্ত্রীকে চক্রের সদস্যরা স্বামীর এনআইডি কার্ড ও ব্যাংকের এটিএম কার্ড সাথে নিয়ে আসতে বললে কোন উপায় না পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার দিকে নগদ ২৫ হাজার টাকা এবং এনআইডি কার্ড, এটিএম কার্ড নিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। তখন অপহরণকারী ইমতিয়াজ উদ্দিন তোফায়েল উক্ত টাকা এবং এনআইডি কার্ড, এটিএম কার্ড বুঝে নিয়ে পরবর্তীতে পঁঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করে সাদা কাগজে ভুক্তভোগীর স্বাক্ষর নেয়।পরবর্তীতে ৫০ হাজার টাকা না দিলে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে ধারনকৃত সাজানো ভিডিও চিত্রগুলো সোস্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিবে বলে হুমকী প্রদান করে তাকে ছেড়ে দেয়।ছাড়া পাওয়ার পর ওইদিন বিকাল সাড়ে চারটার দিকে পুরো ঘটনাটি র্যাবকে জানান ওই ভূক্তভোগী। ওই ব্যাক্তির অভিযোগের ভিত্ততে শুক্রবার রাতে অভিযান পরিচালনা করে মহিপাল এলাকা হতে অপহরণের সাথে জড়িত আসামী সদর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে যুবলীগ নেতা ইমতিয়াজ উদ্দিন তোফায়েল (৩৪) ও একই গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৬),মৃত হারুন বাবুর্চির ছেলে জাহিদ হোসেন (১৫), শর্শদী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৫),দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনিয়া গ্রামের মো. কবিরের ছেলে রফিকুল ইসলাম আরিফ (২১) কে গ্রেফতার করে।ফেনীস্থ র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আবছার জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ মুক্তিপনের জন্য মানুষকে অপহরণ করে পরবর্তীতে তাদের জিম্মি করে পরিবার পরিজনের নিকট হতে মুক্তিপন আদায় করে আসছে।
ফেনী শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকার দ্বিতল বিশিষ্ট একটি ভবনের উপরের অংশে ভাড়া নিয়ে পাওয়ার জোন জিম সেন্টার নামে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই ভিতরে কি হচ্ছে। কয়েকমাস আগে ভবনটির নিচ তলায় বাসা ভাড়া নিয়ে জিম সেন্টার গড়ে তোলেন শর্শদী ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন তোফায়েল।
শুক্রবার রাতে র্যাবের অভিযানের সময় দেখা যায়, সেখানে জিমের কিছু উপকরণ রয়েছে। মেঝেতে রয়েছে একটি তোষক। ‘বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক দ্বারা জিম করানো হয়’ এমন প্রচার থাকলেও কোন প্রশিক্ষক রাখা হয়নি শুরু থেকে।
আশপাশের ব্যবসায়ীরা জানান, জিম সেন্টারের সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এখানে জিম করানো হয় কিনা কারো জানা নেই। প্রতিদিন জিম করতে আসতে কাউকে দেখাও যেতোনা। মাঝেমধ্যে নারী-পুরুষের আনাগোনা দেখা যায়। ব্লাকমেইলিং ও মুক্তিপণের জন্য আটকে রেখে টর্চারের বিষয়টি অনেকে জানলেও ইমতিয়াজ তোফায়েল যুবলীগের নেতা হওয়ায় কেউ ভয়ে বিষয়টি মুখে আনতো না।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি