নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। মূলত প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের অবহেলাতেই প্রাথমিকে বাড়ছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কারণ নিজ জেলাতেই দীর্ঘদিন অবস্থান করে শিক্ষা কর্মককর্তা এবং শিক্ষকরা স্বজনপ্রীতি, শিক্ষা বাণিজ্য ও নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকের বিরুদ্ধেই কাজে ফাঁকি দেয়া, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকা এবং প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন একই কর্মক্ষেত্রে অবস্থানসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিক শিক্ষা মাঠ পর্যায়ে ঢেলে সাজানো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সেজন্য ব্যাপক বদলির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে তাতে প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারাদেশে ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষক রয়েছে। আর ওসব শিক্ষকদের পাঠদান তদারকি করতে থানা পর্যায়ে ২ হাজার ৬০১ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আছে। আবার তাদের দেখেন ৫০১ জন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তার বাইরে সার্বিক কার্যক্রম মূল্যায়ন ও তদারক করে থাকে ৬৪ জন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। প্রাথমিকের মাঠ প্রশাসনের ৩ স্তর এভাবেই চলছে। নিয়মানুযায়ী মাঠ পর্যায়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়মিত বদলি হওয়ার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে দীর্ঘদিন তাদের বদলি বন্ধ ছিল। একইভাবে একজন শিক্ষক দীর্ঘদিন এক স্থানে থাকায় চাকরি ছাড়াও তারা নানা কাজে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে ব্যাহত হয় শিক্ষা কার্যক্রম। পরিস্থিতি বদলে ইতোমধ্যে ৩২ জন প্রাথমিক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বদলি হয়েছে আর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী অক্টোবরে ২ হাজার ৬০১ জন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিজ জেলার বাইরে পাঠানো হবে। আর ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে সহকারী শিক্ষক বদলির আবেদন। এ সময় সারাদেশের ৬৫ হাজার সরকারী প্রাথমিকের সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষক আবেদন করতে পারবে। পর্যায়ক্রমে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও অনলাইনের মাধ্যমে বদলি করা হবে।
সূত্র জানায়, বিগত ১৯৮৫ সালে দেশে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিইও) পদ ছিল ১ হাজার ৮৩৩টি। ওই সময় ৫০ ভাগ সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদোন্নতির মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হতো। আর ১৯৯৪ সালে ওই পদে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২ হাজার ৯৯টি। পদোন্নতির মাধ্যমে মাত্র ২০ শতাংশ এটিইও শিক্ষা কর্মকর্তা হয়েছে। এবার বদলি হবে ২ হাজার ৬০১ জন এটিইও। তাছাড়া ইতোমধ্যে সহকারী শিক্ষকদের বদলি আবেদন শুরু হয়েছে। তারপর সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলি করা হবে। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়মিত বদলি হওয়ার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে দীর্ঘদিন তাদের বদলি বন্ধ ছিল। আর একই জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার কারণে ওসব কর্মকর্তারা যথাযথ পারফর্ম করতে পারছে না।
সূত্র আরো জানায়, দীর্ঘ আড়াই বছর পর সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বদলির জন্য শিক্ষকরা অনলাইনেই আবেদন করবেন ও অনলাইনেই বদলি হবেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিকের শিক্ষকরা জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আন্তঃউপজেলা থেকে আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগ পর্যায়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে বদলি হতে পারবেন। শিক্ষকরা সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির মেয়াদ ন্যূনতম ২ বছর হলে এবং পদ শূন্য থাকলে আন্তঃউপজেলা, জেলা ও আন্তঃবিভাগ বদলি হতে পারবেন। তবে দুই বছরের মধ্যে একই উপজেলা বা থানায় পদ শূন্য হলে তবেই বদলি করা হবে। তাছাড়াও বদলির পর ৩ বছর না হওয়া পর্যন্ত কোন শিক্ষক পুনঃবদলির জন্য বিবেচিত হবে না। যেসব বিদ্যালয়ে ৪ জন বা তার কম শিক্ষক আছে, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:৪০-এর বেশি রযেছে, সেসব বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক বদলি করা হবে না। বদলির জন্য শিক্ষকদের একটি লিঙ্ক দেয়া হবে। ওই লিঙ্কে ঢুকে শিক্ষকরা তাদের আইডি নম্বর দিয়ে লগ ইন করবেন। তারপর তার ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী স্কুলে আবেদন করবেন। আবেদন সঠিক না হলে সফটওয়্যার আরো কিছু বিদ্যালয় তাকে সাজেস্ট করবে। তালিকা থেকে স্কুল পছন্দ করার পর বদলি হওয়া যাবে। বদলি আাদেশ শিক্ষকরা নিজেই ডাউনলোড করতে পারবেন। মাঠ পর্যায়ের কোন কর্মকর্তা ওই আদেশ ৩ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, এটিইও বা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সঙ্কট থাকলেও ঢাকার ৩৪২ স্কুলে অতিরিক্ত ১ হাজার ৯৫৩ জন সহকারী শিক্ষক হিসেবে রয়েছে। সংযুক্ত শিক্ষক হিসেবে ঢাকার বাইরের বিদ্যালয় থেকে ওসব শিক্ষক এসেছে। ফলে একরকম ভেঙ্গে পড়েছে ঢাকা মহানগরে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে ওসব শিক্ষকদের ঢাকার বাইরে এক আদেশের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ এস রবিউল ইসলাম জানান, পুরো চাকরি জীবনে এটিইওদের পদোন্নতি নেই। উপজেলা সমাজসেবা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সবাই নিজের জেলায় চাকরি করছে। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নবম গ্রেড। তারাও নিজের জেলায় চাকরি করছে। অথচ এটিইওরা ১০ গ্রেডে চাকরি করে এবং অধিকাংশই নারী কর্মকর্তা। এখন একযোগে বদলি করা হলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে।
সার্বিক বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান জানান, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনেকে স্বজনপ্রীতি, বাণিজ্য ও নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে। নিজ জেলায় কাজ করার কারণে তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারী প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতেই প্রাথমিকের মাঠ প্রশাসন ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ