নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সঙ্কটের মধ্যেই কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে চলে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে ডলার নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। চলতি বছরের মে থেকে জুলাই- ৩ মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪২ শতাংশ বেশি। তার মধ্যে গত জুলাই মাসেই প্রায় ৪৪২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ রেকর্ড। গত বছরের একই মাসের চেয়ে তা প্রায় ২৭৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত এপ্রিল থেকে কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন টানা বাড়ছে। এপ্রিল মাসে কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪১ কোটি টাকা। যা গত মে মাসে বেড়ে ৩৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা হয়। আর জুনে আরো বেড়ে হয় ৩৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং জুলাই মাসে ৪৪২ কোটি ছাড়িয়ে যায়। মূলত বিভিন্ন প্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যাচ্ছে তাদের একটি বড় অংশই কার্ডের মাধ্যমে ডলার নিয়ে যাচ্ছে। ওই কারণেই কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বেড়েছে। তবে প্রয়োজন ছাড়া কেউ কার্ডে ডলার খরচ করছে কিনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা নজরদারি করছে। সম্প্রতি ৭১টি ক্রেডিট কার্ডে সীমার বেশি লেনদেন করার প্রমাণ পাওয়ায় ২৭টি ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। মূলত করোনার পর চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের বিদেশ ভ্রমণ বেড়েছে। একইভাবে বেড়েছে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনও। তাছাড়া কার্ডে কম খরচে ডলার নেয়ার সুযোগ থাকার কারণেও এ জাতীয় লেনদেন বাড়তে পারে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই বিদেশ ভ্রমণে কার্ডে ডলার নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ডুয়েল কারেন্সি বা দ্বৈত মুদ্রার ওসব কার্ড দিয়ে দেশে বসেই বিদেশের হোটেল বুকিং, নির্দিষ্ট পরিমাণে কেনাকাটাসহ নানা খরচ করা যাচ্ছে। তাছাড়া চিকিৎসা, পড়াশোনা ও কেনাকাটাসহ নানা কারণে বিদেশে যাওয়ার সময় অনেকেই কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা এনডোর্সমেন্ট করে নিয়ে যাচ্ছে। এতোদিন কার্ডে নিলে ডলারের খরচ কম পড়তো। ক্রেডিট কার্ড ছাড়াও ডেবিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের অনুমতির পর থেকে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। ক্রেডিট কার্ডের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২০ সালের জুনে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের হিসাবের বিপরীতে আন্তর্জাতিক ডেবিট কার্ড ইস্যুর অনুমোদন দেয়।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী কার্ডে বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার খরচ করা যাবে। ব্যাংক গ্রাহকদের কাছে নগদে ও কার্ডে দুভাবেই ডলার বিক্রি করে। এতোদিন নগদের চেয়ে কার্ডে ডলার নেয়ার খরচ ছিল কম। ওই কারণেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলারের একটি বড় অংশ বিদেশে চলে যাচ্ছে। তবে সম্প্রতি কার্ডের ডলারের বিনিময় মূল্য নগদ ডলারের মতোই হওয়ার বাফেদা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (এবিবি) বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, বর্তমানে আগের চেয়ে বিদেশ ভ্রমণ বেড়েছে। পর্যটন, চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার কাজে অনেকেই বিদেশে যাচ্ছে। আর যারা বিদেশে যাচ্ছে তারা কার্ডে ডলার এনডোর্সমেন্ট করে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে কার্ডে ডলার নেয়ার পরিমাণ বেড়েছে। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্ডে নেয়া ডলারের দামও হবে ব্যাংকের ক্যাশ ডলারের বিনিময় মূল্যে। ফলে ইতোমধ্যে কার্ডে ডলার নেয়ার খরচ বেড়ে গেছে। তাতে আগামীতে কার্ডে ডলার নেয়ার প্রবণতা হয়তো কমে আসবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, করোনার পর অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশে যাচ্ছে। আগে অনেকেই কার্ডের পাশাপাশি নগদ ডলারও নিতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে নগদ ডলারের সঙ্কট থাকায় কার্ডের মাধ্যমে বেশি নিয়ে নিচ্ছে। এ কারণে বেড়েছে কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ