নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য এখন খুবই চড়া। পরিস্থিতিতে সামালে বিশ্বের অনেক দেশই জ্বালানি হিসাবে কয়লাকে প্রাধান্য দিতে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারও দেশে মজুত কয়লা উত্তোলনের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু এখনো কোন প্রক্রিয়ায় তা চূড়ান্ত হয়নি। তবে খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশে কয়লার মজুত এবং উত্তোলন পরিস্থিতি নিয়ে জ্বালানি বিভাগ একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের কয়লা খনিগুলোর ওপর ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের ৫টি কয়লা খনির মধ্যে বর্তমানে একমাত্র বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। বড়পুকুরিয়ায় মোট (প্রমাণিত ও সম্ভাব্য) মজুত আছে ৩৪৬ দশমিক ৭১ মিলিয়ন টন। তাছাড়া অন্য খনিগুলোর মধ্যে ফুলবাড়িতে ৫৭২ মিলিয়ন টন, খালাসপীরে ৫২৩ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন টন, জামালগঞ্জে ১ হাজার ৫৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন টন এবং দীঘিপাড়ায় ৬০০ মিলিয়ন টন। মোট মজুত ৩ হাজার ১৩৯ দশমিক ১০ মিলিয়ন টন। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র একটি খনি থেকে কয়লা তোলা হচ্ছে। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে ৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। যা দিয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫৬০ মেগাওয়াট পূর্ণ ক্ষমতার অর্ধেক ২৫০ মেগাওয়াট সচল রাখা যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া দেশীয় কয়লায় চলছে দেশে এখন একটি মাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র। আর দেশে দুটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা ও ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হচ্ছে। আগামী বছর আরো দুটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মাতারবাড়ি এবং ১৩২০ মেগাওয়াটের বাশখালীর কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। সব মিলিয়ে বাশখালী, পায়রা, মাতারবাড়ি ও রামপালে ৫ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা আমদানি করতে হবে। আর কয়লা আমদানি করে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার দেশের কয়লা উত্তোলনের কথা ভাবছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যমান জ্বালানি সংকটে সারা বিশ্বই কয়লার দিকে ঝুঁকছে। সরকারও সেদিকে নজর দিতে পারে। তবে আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং বা ভূগর্ভস্থ খনি করলে সর্বোচ্চ ৪০ ভাগের বেশি কয়লা তোলা সম্ভব হয়। বেশি কয়লা তুলতে চাইলে ওপেন পিট বা উন্মুক্ত খনি করার বিকল্প নেই। কিন্তু দেশের কয়লা খনিগুলোর গভীরতা এত বেশি যে ওপরের মাটি সরিয়ে ওপেন পিট করা সহজ নয়।
অন্যদিকে এ বিষয়ে পট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, সব উৎস থেকে জ্বালানি সংস্থানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কোন প্রক্রিয়ায় কয়লা উত্তোলন করা যায় তা যাচাই করা হচ্ছে। কয়লা খনিগুলোর ওপরের জমিতে ব্যাপকভাবে ফসল উৎপাদন হয়। ওই খনিগুলোর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলে বিস্তীর্ণ এলাকা দেবে যাবে। সেখানে আর ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে না। সেজন্যই কয়লা তোলার বিষয়ে শুরুতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল। ইতো মধ্যে বড়পুকুরিয়া থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড পদ্ধতিতে (সুড়ঙ্গ পথে) তোলায় বিস্তীর্ণ এলাকা দেবে গেছে। অন্য খনিগুলো উন্নয়ন করলে একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আর ওপেন পিট (উন্মুক্ত পদ্ধতি) করলে পুরো এলাকা খুঁড়ে মাটি সরিয়ে ফেলতে হবে। ফলে সেখানেও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নষ্ট হয়। ওসব জমিতে আর কখনো ফসল ফলে না।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২