নিজস্ব প্রতিবেদক :
পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার প্রথম দিনে নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। শ্রমিকরা দূর-দূরান্ত থেকে হেঁটে, অটোরিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনে এসে রোববার (১লা আগষ্ট) সকাল থেকে নিজ নিজ কর্মস্থল যোগ দেন। এদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার বা কারাখানায় প্রবেশের আগে শরীরের তাপমাত্রা মেপে, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক দিয়ে লাইন ধরে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
কোনও শ্রমিককে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া এবং যানবাহন চালুর বিষয়টি পরে সিদ্ধান্ত হওয়ায় বেশিরভাগ শ্রমিককেই বিকল্প পরিবহনে কাজে আসতে হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সরকার গার্মেন্টস খোলা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দিন আগে। কিন্তু শ্রমিকরা কীভাবে আসবে? গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত দিয়েছে গত শনিবার বিকালে।
যে কারণে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। গণপরিবহন চালু করা হলেও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে শ্রমিকদের। জামালপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ এসেছেন হাসিনা বেগম, শাহানারা ও আছিয়া আক্তারসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক। তাদের অভিযোগ, গণপরিবহনের চালকরা তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি দেড় হাজার টাকা করে ভাড়া নিয়েছে। আট হাজার টাকা বেতনে কাজ করে দেড় হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে এসে যদি কাজে যোগ দিতে হয়, তাহলে আমাদের মতো গরিবের সংসার চলবে কীভাবে? রাজশাহী থেকে নারায়ণগঞ্জে এসেছেন নুরবানু ও শাহাদাত দম্পতি। ফতুল্লার ক্রোনি গার্মেন্টসে চাকরি করেন তারা। রাজশাহী থেকে গত শনিবার দুপুরে ট্রাকে ওঠেন প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। রাতে কয়েক দফায় বৃষ্টিতে ভিজেছেন। তারা বলেন, হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং গণপরিবহন পরে চালু করায় তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে। তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। বগুড়া থেকে নীট কনসার্ন গার্মেন্টসে যোগ দিতে আসা আনোয়ার হোসেন ও রমিজা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, বগুড়া থেকে ট্রাকে করে নারায়ণগঞ্জে এসেছেন তারা। ট্রাক চাষাঢ়ায় আসার কথা ছিল। কিন্তু কাঁচপুরে ট্রাক আটকে দেওয়ায় তাদের ভেঙে ভেঙে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নীট কনসার্ন গার্মেন্টসে কাজে যোগ দিতে হচ্ছে। অনেকে আবার সারারাত ট্রাক ও বাসে চড়ে নারায়ণগঞ্জে এসে সকাল ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জে নেমেছেন। কোনও রকমে ব্যাগ বাসায় রেখেই কাজে যোগ দিয়েছেন তারা। নারায়ণগঞ্জের মডেল গার্মেন্টেসের নির্বাহী পরিচালক (ভূমি ও উন্নয়ন) মনিরুজ্জামান বলেন, আজ (রোববার, ১লা আগষ্ট) কাজে যোগ দেওয়ার প্রথম দিন হওয়ায় সকাল থেকে শ্রমিকরা আসছেন। আমরা বেলা ১১টা-১২টা পর্যন্ত যেসব শ্রমিক কাজে যোগ দিতে আসছেন, তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি। শ্রমিকদের শতভাগ স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি আমার নিশ্চিত করছি। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি শ্রমিককে মাস্ক ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার ও শরীরের তাপমাত্র মেপে এবং জুতা-স্যান্ডল জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। বাইরের থেকে শ্রমিকরা কারখানার ভেতর অনেক নিরাপদে কাজ করছেন। বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ) সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি গার্মেন্টস কারখানায় ২০ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। প্রথম দিন অর্ধেকের বেশি শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম