নিজস্ব প্রতিবেদক:
সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত সরকার নীতিগত, শুল্ককর কমানোসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দেয়ায় দেশীয় পতাকাবাহী বহরে দিন দিন যুক্ত হচ্ছে নতুন জাহাজ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসেই ১৮টি জাহাজ বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনের বহরে যুক্ত হয়েছে। তাতে বাংলাদেশি পতাকাবাহী মোট জাহাজের সংখ্যা ৯০টিতে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তা রেকর্ড। আর আগামী ডিসেম্বর নাগাদ আরো অন্তত ১০টি জাহাজ যুক্ত হয়ে জাহাজের সংখ্যা ১০০ ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। জাহাজ শিল্প মালিক ও নৌ বাণিজ্য দপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকার জাহাজ কিনতে উৎসাহ দিয়ে সরকার গত বাজেটে আগাম কর প্রত্যাহার, পুরনো জাহাজের আয়ুষ্কাল ২২ বছরের পরিবর্তে ২৫ বছর এবং আমদানির পর বিক্রয়ের সময়সীমা ৫ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর নির্ধারণ করে। ফলে জাহাজ কেনা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত সরকারের নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর ৯০টি সমুদ্রগামী জাহাজ নিবন্ধন করেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৭টি খোলা পণ্যবাহী জাহাজ, ১৩টি ট্যাংকার, ৩টি গ্যাস পরিবহনকারী জাহাজ, ৬টি কনটেইনার জাহাজ এবং একটি মাল্টিপারপাস জাহাজ রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশের ব্যবসায়ীদের জাহাজ কেনা বাড়ছিল। তখন জাহাজের সংখ্যা ছিল ৬৭টি। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকেই হঠাৎ জাহাজ কেনা কমতে শুরু করে এবং ২০১৫ সালে তা ৪৭টিতে নেমে আসে। ২০১৬ সালে জাহাজের সংখ্যা নামে ৪৫টিতে, ২০১৭ সালে ৩৮টি এবং ২০১৮ সালে তার সংখ্যা ৩৭টিতে নামে। কিন্তু ২০১৯ সালে জাহাজ কেনার সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করে। তখন জাহাজ বেড়ে ৪৭টিতে উন্নীত হয়। আর ২০২০ সালে জাহাজের সংখ্যা বেড়ে এক লাফে ৬৪টিতে উন্নীত হয় অর্থাৎ ১৪টি জাহাজ বাড়ে। ২০২১ সালে জাহাজের সংখ্যা আরো বেড়ে ৭৩টিতে উন্নীত হয় এবং সর্বশেষ ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত ওই সংখ্যা ৯০টিতে পৌঁছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের কেনা জাহাজগুলো নিজেদের প্রয়োজন ছাড়াও দেশি-বিদেশি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের নিজেদের পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে। তাতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। দেশের ৯০টি সমুদ্রগামী জাহাজের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কেএসআরএম স্টিল বা কবির গ্রুপ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মেঘনা গ্রুপের বহরে রয়েছে ১৮টি জাহাজ। আকিজ গ্রুপের আছে ১০টি জাহাজ। তাছাড়া সরকারি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) ৮টি, কর্ণফুলী গ্রুপের ৬টি, বসুন্ধরা গ্রুপের ৬টি, বিএসএ শিপিংয়ের ৩টি, এমআই সিমেন্টের ৩টি, ভ্যানগার্ড মেরিটাইমের ২টি, ডুরিয়া শিপিংয়ের ২টি, হানিফ মেরিটাইমের ২টি, ওরিয়ন গ্রুপের একটি, মবিল-যমুনা গ্রুপের একটি, পিএনএন শিপিংয়ের একটি, অ্যাডভান্সড শিপিংয়ের একটি, ডরিন শিপিংয়ের একটিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জাহাজ রয়েছে। বড় শিল্প গ্রুপগুলোর জাহাজ কেনার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল মূলত নিজেদের কাঁচামাল নিজেদের জাহাজে পরিবহন করে অর্থ ও সময় সাশ্রয় করা। ওই উদ্দেশ্য পূরণে শিল্প গ্রুপগুলো পুরোপুরি সফল। এখনো প্রধানত গ্রুপগুলোর চাহিদা মেটাতেই জাহাজ কিনছে। তার বাইরে ইদানীং নতুন প্রতিষ্ঠান বা ছোট প্রতিষ্ঠানও জাহাজ কিনে পণ্য পরিবহন করছে। ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আগে কম থাকলেও গত ৩ বছরে অন্তত আটটি হয়েছে। দু-একটি করে জাহাজ কিনেছে এ রকম অন্তত ৬টি নতুন প্রতিষ্ঠান আছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ জানান, সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পের বিকাশে সরকারের দেয়া সুবিধার আলোকেই মূলত শিল্পোদ্যোক্তারা জাহাজ কিনতে এগিয়ে এসেছে। যেভাবে জাহাজ নিবন্ধিত হচ্ছে তাতে মেঘনা গ্রুপ প্রতি মাসে একটি করে জাহাজ যোগ করবে। আর এইচআর লাইনস যোগ করবে একসঙ্গে ৬টি জাহাজ। সেগুলো চীনে তৈরি হচ্ছে। আরো কয়েকটি জাহাজ যুক্ত করার প্রক্রিয়ায় আছে। আশা করা যায় ২০২২ সালের শেষে জাহাজের সংখ্যা ১০০টিতে উন্নীত হবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ