November 25, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, September 28th, 2022, 1:27 pm

দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা হামলা-মামলায় জড়িয়ে পড়ছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা-মামলায় জড়িয়ে পড়ছে। তাতে ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন কাজ। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৮২ প্রকৌশলী মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। তাতে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়নকাজ। বাড়ছে অনিয়ম-দুর্নীতি। সম্প্রতি সরকারি দপ্তরে কাজ করা প্রকৌশলীদের সংস্থাগুলো ঠিকাদারদের হাতে তাদের সদস্যদের মার খাওয়া নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে উন্নয়ন কাজ নির্বিঘœ রাখতে প্রকৌশলীদের নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্থানীয় পর্যায়ে ঠিকাদারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলীর গাঁটছড়া ঠিক থাকলে স্বাভাবিক গতিতে কাজ হয়। কিন্তু তার সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ জড়িত থাকলে অনিয়ম-দুর্নীতি দুটোই বাড়ে। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিক আর প্রকৌশলীর মধ্যে বনিবনা না থাকলে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হতে থাকে। দেশের অনেক জেলা-উপজেলায় জনপ্রতিনিধিরা স্ত্রী, সন্তানের নামে লাইসেন্স করে ঠিকাদারি করছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির পটুয়াখালী সদর উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুর রহমানকে গত এপ্রিলে স্থানীয় ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধির লোকজন মারধর করে। তিনি সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. সোহেলকে এক নম্বর আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। ওই ঘটনায় বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি ঠিকাদারি লাইসেন্স ও কাজ বাতিল করে। পরে ওই ঘটনা আদালতে যায় এবং আদালত ওই আদেশ স্থগিত করেন।
সূত্র জানায়, গত মার্চে পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলায় হামলার শিকার হয় এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী। পটুয়াখালী ও বরিশালকে সংযোগকারী নির্মাণাধীন পাগলা সেতুর সাইট পরিদর্শনে কাজের পরিমাণের ভিত্তিতে বিল দেয়ার কথা জানালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করে। তারপর প্রকৌশলী থানায় মামলা করেন। গত এপ্রিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে প্রতিবেদন ঠিকাদারের পক্ষে না যাওয়ায় এলজিইডির প্রকৌশলীকে মারধর করা হয়। গত ৭ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে হামলা করে ঠিকাদাররা। ১৮ আগস্ট রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার প্রকৌশলী সানোয়ারের বাসভবনে হামলা হয়। সবকটি ঘটনায় হামলার পেছনে ছিলো স্থানীয় ঠিকাদাররা। প্রকৌশলীরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। সম্প্রতি চাঁদপুরের কঢ়ুয়ায় একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী হামলার শিকার হয়। সেজন্য উপজেলা চেয়ারম্যানকে আসামি করে মামলা হয়। মাগুরার উপ-সহকারী প্রকৌশলী, মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী, রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী বিভাগীয় প্রেেকৗশলী হামলার শিকার হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ঠিকাদারদের অভিযোগ- জেলা-উপজেলার প্রকৌশলীরা যে কোনো কাজের জন্য কমিশন দিতে বাধ্য করছে। সংশ্লিষ্ট পিডিদের (প্রকল্প কর্মকর্তা) ফান্ডে টাকা না দিয়ে কাজের বিল পাওয়া যায় না। বিভিন্ন অজুহাতে প্রকৌশলীরা ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা বের করে নিচ্ছে। আর প্রকৌশলীদের মতে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্ত্রী, সন্তানের নামে লাইসেন্স করে কাজ নিচ্ছে। তাদের চাপে স্বাধীনভাবে দরপত্র (টেন্ডার) আহ্বান বা প্রকল্প কাজ করা যায় না। আর যারা কাজ পাচ্ছে না তারা অফিসে এসে হামলা করছে। এমন পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে প্রকৌশলীর চাকরি করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সততা নিয়ে কাজ করা প্রকৌশলীদের পক্ষে কঠিন। তাছাড়া প্রকৌশলীরা উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে অবকাঠামোর তথ্যভা-ার, ম্যাপ, কারিগরি বিনির্দেশ (টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন), ম্যানুয়াল সঠিকভাবে তৈরি করতে পারছে না। বরং বেশির ভাগ স্থানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারদের ইচ্ছায় প্রকল্প প্রণয়ন করতে হচ্ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) ও ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) এর তথ্যানুযায়ী চলতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮২ জন প্রকৌশলী হামলা, মামলা ও শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। তার মধ্যে আইইবির ৪৫ জন প্রকৌশলী এবং ৩৭ জন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। দ্বন্দ্বের জেরে প্রকৌশলীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বিপরীতে জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদাররা প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে তাদের সরিয়ে নেয়ার আবেদন করেছে।
অন্যদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে স্বাধীনভাবে কোনো টেন্ডার হচ্ছে না। ফলে পেশাদার ঠিকাদাররা কাজ পাচ্ছে না। অপেশাদার ঠিকারদাররা কাজ না বুঝায় প্রকৌশলীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রকৌশলীরাও সুযোগ নিচ্ছে। উপজেলা পরিষদ আইন ও আরপিও অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিরা লাভজনক পদে থেকে নিজ এলাকায় কাজ করতে পারে না। যদি কোনো জনপ্রতিনিধির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থাকে তাহলে তিনি নিজ এলাকার বাইরে কাজ করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জানান, প্রকৌশলীদের হয়রানির ঘটনাগুলো হালকা করে দেখা হচ্ছে না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অনেক জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্তও করা হয়েছে। এমন অভিযোগ আগে আরো বেশি ছিল। এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ওসব ঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলা যায় না। তাছাড়া কোনো কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে পাঁচ বছরের বেশি থাকলে বদলি করা হচ্ছে। বদলি আদেশ মানবে না এটা হতে পারে না। তবে অনেক সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অনুরোধে রাখা হয়।