অনলাইন ডেস্ক :
গত বছরের শুরুর দিকে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার আগে, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা ও গ্রেপ্তার করার আগে দেশটির দক্ষিণের শহর দাওয়েইতে শান্তিপূর্ণ এক জীবন উপভোগ করছিলেন হ্নিন সি। নিয়মিত অফিস করতেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘুরে বেড়াতেন বন্ধুদের সঙ্গে। কিন্তু সেসব দিন এখন অতীত। সামরিক শাসন বিরোধীদের ‘নিভিয়ে দেয়ার’ প্রচেষ্টায় মূল প্রতিরোধ গড়ে তোলা তরুণদের ওপর দমন-পীড়ন বাড়িয়েছে মিয়ানমার জান্তা। এতে সেখানে তরুণ-তরুণীদের জীবন যেমন ঝুঁকির মুখে পড়েছে, তেমনি দেশটির ভেঙে পড়া অর্থনীতি ভেস্তে দিচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবনকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন। অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস-এর যুগ্ম সম্পাদক কো বো চি’র মতে, জান্তা সরকার এখন দেশের প্রতিটি তরুণ-তরুণীকে তাদের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছে। অলাভজনক স্বাধীন এই সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৯০০ জনেরও বেশি লোক গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে অংশ নিয়ে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নে নিহত হয়েছেন এবং একই বয়সের প্রায় ৩ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কো বো চি বলেন, ‘তরুণরা দেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু তারপরও আমাদের এই তথাকথিত সামরিক বাহিনী আটক, নির্যাতন এবং হত্যা করছে। তারা আমাদের দেশ এবং ভবিষ্যৎ সমাজকে ধ্বংস করছে।’ মিয়ানমারের দক্ষিণের তানিনথারি অঞ্চলে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী দিকে আটজনের সঙ্গে কথা বলেছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। অঞ্চলটিতে বিগত কয়েক বছরে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে স্থানীয় সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলি। আর নজরদারি, হত্যা এবং গ্রেপ্তার বাড়িয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সামরিক বাহিনী। সাক্ষাৎকারে ওই আটজন বলেন, অনেক তরুণ-তরুণী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, অনেকে সশস্ত্রপ্রতিরোধ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাগুলোতে আশ্রয় চেয়েছে কিংবা নিজেরাই প্রতিরোধে যোগ দিয়েছে। আর যারা এখনও সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় রয়েছেন, তারা দিন পার করছেন ভয় ও হতাশা নিয়ে। ২০ বছরের তরুণী হ্নিন সি বলেন, ‘আমরা তরুণরা এখানে আটকে আছি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ আশাহীন।’ আল জাজিরা যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তাদের মধ্যে একজন প্রতিরোধ যোদ্ধা ছাড়া বাকি সবাই সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ভয়ে প্রকৃত নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের কয়েক দিনের মধ্যে মিয়ানমারে শুরু হয় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ। কিন্তু গত এপ্রিলে শত শত নিরস্ত্র বেসামরিক লোকের ওপর সেনাবাহিনীর প্রাণঘাতী বল প্রয়োগ দেশজুড়ে তরুণ-যুবকদের বাধ্য করে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে। তবে জনসাধারণ প্রতিরোধ গড়ে তোলায় দমন-পীড়নও বাড়িয়েছে সামরিক বাহিনী। সেনা শাসনবিরোধীরা যাতে নিরাপদে না থাকতে পারে সেজন্য অভিযানও বাড়িয়েছে জান্তা। সন্দেহভাজন ভিন্নমতাবলম্বীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযানের পাশাপাশি চলছে নিয়মিত নজরদারি।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু