নিজস্ব প্রতিবেদক:
টাইম-টেবিলে বেশিরভাগ ট্রেনের রানিং টাইম বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ কমে গেছে ট্রেনগুলোর গতি। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ৪৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে ২১টির রানিং টাইম বেড়েছে এবং ১৬টি ট্রেনের রানিং টাইম সামান্য কমেছে। আর রেলওয়ের পঞ্চিমাঞ্চলের ৪২টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে ১৮টির রানিং টাইম বেড়েছে এবং ১৪টির ট্রেনের সামান্য কমেছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের যেসব ট্রেনের রানিং টাইম বাড়ানো হয়েছে সেগুলোর প্রায় সবক’টিই গন্তব্যে পৌঁছতে সময় নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলগামী সব ট্রেনেরও একই অবস্থা। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনগুলোর গতি কমার সঙ্গে সঙ্গে সময়ানুবর্তিতায়ও পিছিয়ে পড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর বাংলাদেশ রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর সময়সূচি মেনে চলার হার ছিল ৯১ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সময়সূচি মেনে ট্রেন চলার হার নেমে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। ট্রেনের গতি কমে যাওয়া আর সময়সূচি মেনে চলার হার কমে যাওয়ায় যাত্রী ভোগান্তি বেড়েছে। আর ঈদে-উৎসবে যাত্রীর চাপ বাড়লে ওই ভোগান্তি আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
সূত্র জানায়, বিগত ২০০৯ সালের পর থেকে রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে ৯০ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। ওই টাকায় ৬৫০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ, ২৮০ কিলোমিটার মিটার গেজ রেললাইনকে ডুয়াল গেজে রূপান্তর, ১ হাজার ২৯৭ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন, ৭৩২টি নতুন রেল সেতু নির্মাণ, ৫২০টি যাত্রীবাহী কোচ ও ৯৬টি ইঞ্জিন সংগ্রহসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। তবে ওসব বিনিয়োগ বিচ্ছিন্নভাবে ও প্রকল্পকেন্দ্রিক হয়েছে। ফলে তা যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে খুব একটা পরিবর্তন আনতে পারেনি।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যস্ততম জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে যেসব অবকাঠামো রয়েছে তা দিয়ে প্রতিদিন ২২টি ট্রেন চলার কথা থাকলেও ওই সেকশনটিতে প্রতিদিন চলছে ৪২টি ট্রেন। সিঙ্গেল লাইনের সেকশনটিতে একটি ট্রেন কোনো স্টেশন ত্যাগ করার পর পরবর্তী স্টেশনে না পৌঁছানো পর্যন্ত সেখানে আর কোনো ট্রেন প্রবেশের সুযোগ থাকে না। আর সক্ষমতার দ্বিগুণ ট্রেন চলায় প্রতিটি ট্রেনেরই ক্রসিংয়ে বাড়তি সময় ব্যয় করতে হয়। ফলে ট্রেনের গতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। বর্তমানে ঢাকা থেকে রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও রংপুরগামী ট্রেনগুলোর বেশির ভাগই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। আর পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রায় পুরোটাই মিটার গেজ লাইন। সম্প্রতি রেলের বহরে মিটার গেজ লাইনে চালানোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কেনা ৩০টি ইঞ্জিন যুক্ত হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ, ঢাকা-নোয়াখালী, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে নতুন ইঞ্জিনগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ওসব রুটের রেলপথ ও রেলসেতু নতুন কেনা ইঞ্জিনগুলোর ভার বহনে সক্ষম নয়। আর যেসব পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে ওসব রুটে ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে সক্ষমতা কমে যাওয়ায় সেগুলোর গতি থাকে কম। ফলে গন্তব্যে পৌঁছতে বেশি সময় লাগছে।
এদিকে বাংলাদেশ রেলয়ের বিদ্যমান অবস্থা প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতে, রেলের উন্নয়নে নীতিগত ভুল রয়েছে। খাতটিতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ না করে উল্টো জনবল কমানো হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েে ছস্টেশন। রক্ষণাবেক্ষণ না করে রেল অবকাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে রেলওয়েতে বড় বড় বিনিয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের বড় ঘাটতি আছে। কোন কাজটি আগে করতে হবে আর কোনটি পরে হবে তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে না। ট্রেনের গতি বাড়িয়ে, শিডিউল বিপর্যয় কমিয়ে যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন করার বদলে বরং নতুন রেলপথ, বড় বড় সেতু নির্মাণেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ফলে রেলে বড় বিনিয়োগ হলেও ওই বিনিয়োগ এখন পর্যন্ত যাত্রীসেবার মান বাড়াতে তেমন কোনো দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেনি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, ২০০৯ সালের পর থেকে রেলে বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। আগে যেখানে রেলের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট ছিল ৫০০ কোটি টাকার মতো, সেখানে বর্তমানে বাজেট দেয়া হচ্ছে ১২-১৪ হাজার কোটি টাকা। নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে নতুন ট্রেন। স্টেশন বিল্ডিং, সিগন্যাল ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হয়েছে। একটা সময় রেলের বহরে থাকা ইঞ্জিন-কোচগুলো লক্কড়-ঝক্কড় থাকলেও এখন সব আন্তঃনগর ট্রেনের চেহারা পাল্টে দেয়া হয়েছে। অনেকগুলো বিরতিহীন ট্রেন চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রেলের খারাপ দশা যেমন একদিনে তৈরি হয়নি, তেমনি একদিনেই তা ঠিক করে ফেলা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ