নিজস্ব প্রতিবেদক:
বেসরকারি ৫৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। ওসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি হয়। গত প্রায় ৫ মাস ধরেই সরকার ওসব কেন্দ্রের ভাড়া পরিশোধ বন্ধ রেখেছে। উৎপাদন ও জ্বালানিতেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যয়ের ৮০ শতাংশ খরচ হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো যে কোন সময় উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারে। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, সব সময় ২ মাসের বিল বকেয়া থাকে। ইতোমধ্যে মে মাসের ভাড়ার অর্থ ছাড় করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুেেতর উৎপাদন ক্ষমতা বেশি থাকলেও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ বিভাগ উৎপাদন কমিয়েছে। ওই লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন রাখা হয়েছে। সেজন্যই সরকারের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে নানা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সারাদেশেই বিদ্যুৎ নিয়ে লুকোচুরি চলছে। সরকার লোডশেডিংয়ের সময় বেধে দিলেও তা বেড়ে কয়েকগুণে দাঁড়িয়েছে। তাতে শিল্প ও উৎপাদন কারখানাগুলোতে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আর প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সূত্র জানায়, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলভিত্তিক বিদ্যু কেন্দ্র থেকে দেশের মোট বিদ্যুতের ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ আসে। আর গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৬০ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ আসে। কিন্তু সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ব্যয় বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন সক্ষমতা ও সরবরাহে সামঞ্জস্য না থাকায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে পড়েছে শিল্পোদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ। আর সম্প্রতি জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর থেকে সারাদেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়েছে। বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘিœত হওয়ায় বিভিন্ন খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রফতানি খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জণে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও টান পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্যও বড় অশনি সঙ্কেত।
সূত্র আরো জানায়, দেশের শিল্প খাতে গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কট আগে থেকেই ছিল। তবে গত কয়েক মাসে নতুন করে তা আরো বেড়েছে। বিশেষ করে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর থেকে বিদ্যুতের তীব্র সঙ্কটে উৎপাদনশীল শিল্পগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। দার মধ্যে যেসব শিল্পে বিদ্যুতের বেশি প্রয়োজন হয় সেগুলো হচ্ছে ইস্পাত, সার ও সিরামিকসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা। আর বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়ায় জাহাজ ভাঙা ও পোশাক শিল্পও বড় ধাক্কা খাচ্ছে। বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং গ্যাসের চাপ কম থাকায় বেশিরভাগ কারখানার উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও কিছু শিল্প বিকল্প জ্বালানির উৎস ব্যবহার করে সঙ্কট মোকাবিলার চেষ্টা করছে। তবে গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব দিন দিন আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে তেলভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনার খরচ বাড়ার পর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র বিদ্যুৎ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ৫ মাসের বিল বকেয়া পড়েছে। ফলে বিপিডিবি এখন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কেনা ও সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে আগ্রহী। আর বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো জ্বালানি তেলে মূল্য বৃদ্ধির পরও এখনো বাড়তি ব্যয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ করছে। বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী বিল ইস্যু করার তারিখের ৩০ দিনের মধ্যে বিপিডিবির বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার কথা। কিন্তু টানা ৫ মাসের বিল বকেয়া পড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদানকারীরা পরিচালন খরচ বহন করতে ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপরীতে নেয়া ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সেজন্য ওসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিপিডিবিকে অবিলম্বে বকেয়া পরিশোধের আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যত্থায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আর্থিক সঙ্কটের কারণে উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না জানানো হয়।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান জানান, বিদ্যুৎ সঙ্কটের সমাধানে সরকার কাজ করছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মে মাসের বকেয়া বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আর সব সময়ই দুই মাসের বিল বকেয়া থাকে। বর্তমানে বকেয়া বিল দুই মাসের কিছুটা বেশি হয়েছে। দ্রুতই বিষয়টির সমাধান হবে।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২