নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাজুক অবস্থায় দেশের হিমায়িত চিংড়ি শিল্প। বিদ্যমান বিশ্ব পরিস্থিতি এবং অব্যাহত বিদ্যুৎ সঙ্কটে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ওই দুটি দেশে একেবারেই বন্ধ রয়েছে চিংড়ি রপ্তানি। তাছাড়া ইউরোপের দেশগুলো থেকেও কাক্সিক্ষত রপ্তানি আদেশ মিলছে না। যার ফলে বিপাকে পড়েছে দেশের হিমায়িত চিংড়ি শিল্প। হিমায়িত চিংড়ি শিল্প খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইউরোপেই বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ির ৮৫ ভাগ রপ্তানি হয়। তাছাড়া বাকি ১৫ ভাগ চিংড়ি আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে যায়। দেশে করোনা ভাইরাসের ঢেউ শুরু হলে চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। তাতে দেশের রপ্তানির অন্যতম এ খাতটি আর্থিক মন্দার কবলে পড়ে। করোনা ভাইরাসের আঘাত কেটে যাওয়ার পর হিমায়িত চিংড়ি খাতে আশার আলো ফুটতে শুরু করলেও ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে তা হতাশায় রূপ নেয়। দেশের খুলনা অঞ্চল থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ির সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে রাশিয়ায় ৭৩১ মেট্রিক টন ও ইউক্রেনে ১১৯ মেট্রিক টন চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল। যেখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ৬৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা আয় হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি ২৬৯ টন চিংড়ি হয় এবং তা থেকে আয় হয় ২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। তবে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের পর থেকে ওই দুটি দেশে চিংড়ি রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আর ইউরোপের বাকি দেশগুলো থেকেও কাক্সিক্ষত রপ্তানি আদেশ পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের আগে বাংলাদেশ থেকে ২০০ কনটেইনার চিংড়ি রাশিয়া ও ইউক্রেনে রপ্তানি হতো। তার মধ্যে রাশিয়ায় সরাসরি রপ্তানি হতো ১০ শতাংশ চিংড়ি আর বাকি ৪০ শতাংশ চিংড়ি ইউরোপের দেশ থেকে রপ্তানি হতো। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর থেকেই ওই দুটি দেশে সম্পূর্ণ চিংড়ি রপ্তানি বন্ধের পাশাপাশি ইউরোপের বাকি দেশগুলো থেকেও কাক্সিক্ষত রপ্তানি আদেশ পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি প্রতিদিন দিন-রাত মিলিয়ে ৪/৫ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। ফলে হিমায়িত চিংড়ির উৎপাদন খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে ১০৫টি হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে খুলনা অঞ্চলের কারখানাগুলোতেই শতকরা ৮০ ভাগ চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। হিমায়িত চিংড়ি শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে রেখে সংরক্ষণ করতে হয়। কোনো কারণে ওই তাপমাত্রার ওপরে উঠে গেলে ওই চিংড়িতে ব্যাকটেরিয়া জমতে শুরু করে। তখন তার গুণমান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিদেশে রপ্তানি করা যায় না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন দিন-রাত মিলিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। আর ওই লোডশেডিংয়ের সময় নিজস্ব প্রক্রিয়ায় হিমায়িত প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে হচ্ছে। ফলে হিমায়িত চিংড়ির উৎপাদন খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি