নিজস্ব প্রতিবেদক:
ওজন স্কেলের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পরিবহন খরচ বেড়েছে। সারাদেশে ৩৬টি মহাসড়কের মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই ওজন স্কেল ব্যবহার হচ্ছে। ফলে ওই মহাসড়কে ব্যবসায়ীদের পক্ষে এক বাহনে এক কনটেইনার মালামাল নেয়া সম্ভব হওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের দাম। কারণ আগে বন্দর থেকে এক কনটেইনার পণ্য সরবরাহের জন্য যেখানে দরকার হতো একটি গাড়ি, সেখানে বর্তমানে লাগছে দুটি গাড়ি। তাতে ব্যবসায়ীদের নিয়মিত লোকসান হচ্ছে। সারাদেশের অন্য কোনো মহাসড়কে ওজন স্কেল ব্যবহার না করে শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বসিয়ে পণ্য পরিবহনে বিধিনিষেধ আরোপ পণ্যের ব্যয়ে প্রভাব ফেলছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংশ্লষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে মহাসড়ক রক্ষার নামে শুধুমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল বসানো হয়েছে। আর ওই স্কেলের কারণে চট্টগ্রাম হয়ে আসা পণ্যের দাম অনেকাংশ বেড়ে যাচ্ছে। অথচ দেশের মোংলা বন্দর, বেনাপোল স্থলবন্দরসহ অনেক বন্দর রয়েছে এবং প্রতিটি বন্দর দিয়েই পণ্য আমদানি হয়। কিন্তু শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাই পণ্য পরিবহনে ওজন স্কেলের খড়কে পড়ছে। ১৩ টনের বেশি পণ্য পরিবহন করতে না পারায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরও ব্যয় বেড়েছে। ওই কারণে ব্যবসায়ীরা এক্সেল লোড কন্ট্রোল অপসারণের দাবি করছে।
সূত্র জানায়, সড়ক ঠিক রাখতে ওজন স্কেলের বিকল্প নেই। আর একটি বাহন ১৩ টনের বেশি পণ্য বোঝাই করাটাও নিরাপদ নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বসানো ওজন স্কেলে কারণে ব্যবসায়ীরা একটি পরিবহনে ১৩ টনের বেশি পণ্য বহন করতে পারছে না। তাতে বেড়ে যাচ্ছে পণ্য আনা-নেওয়ার খরচ। ফলে স্কেলের কারণে আমদানি-রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম বন্দরের স্থলে অন্য বন্দর ব্যবহারকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তা সত্ত্বেও পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য মহাসড়কও ওজন স্কেলের আওতায় আনা হবে। মূলত পণ্যবাহী গাড়িতে ওভারলোডিংয়ের কারণে মহাসড়ক বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণেই অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান চলাচল ঠেকাতেই সরকার ২০১২ সালে এক্সেল লোড নীতিমালা প্রণয়ন করে। ওই নীতিমালা না মানলে প্রতিটি পণ্যবাহী যানবাহন ২ থেকে ১২ হাজার জরিমানা গুনতে হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড ও দাউদকান্দি এলাকার দুই জায়গায় ওজন মাপার স্কেল স্থাপন করে দিয়ে চাকাভেদে প্রতিটি শ্রেণির গাড়ির জরিমানার হারও নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনের জন্য ৪টি ধাপ পর্যন্ত ওই জরিমানা দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সারাদেশে এক নিয়ম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আরেক নিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়। সারাদেশের কোথাও লোড এক্সেল নেই কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে লোড এক্সেল বসানো হয়েছে। এটা ঠিক নয়। পণ্য পরিবহনে যদি এভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় তাহলে পণ্যের ব্যয়ে প্রভাব ফেলবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। যা সাধারণ মানুষের জন্যে হবে কষ্টকর। সারাদেশে যেভাবে আছে সেভাবেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে করা হউক।
অন্যদিকে এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান জানান, বর্তমানে এক্সেল লোড-সংক্রান্ত নীতিমালা কার্যকর রয়েছে। শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল বসানো হচ্ছে তা ঠিক নয়। দেশের অপরাপর মহাসড়কেও ওজন স্কেল বসছে। মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আরো প্রায় ২৮টি মহাসড়কে নতুন করে ওজনসীমা নিয়ন্ত্রণ স্কেল বসানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেগুলো বসানো হলে দূর্ঘটনা থেকে সুফল মিলবে।
আরও পড়ুন
আবারও ৩ দিনের তাপপ্রবাহের সতর্কতা
আজ দেশের উদ্দেশে আল হামরিয়া বন্দর ছাড়বে এমভি আব্দুল্লাহ
বাগেরহাটে ট্রাকচাপায় ভ্যান অরোহী ৩ জন নিহত